এমপিও নীতিমালা সংশোধনী চুড়ান্তকরণের পরবর্তী সভা ১ সেপ্টেম্বর

প্রকাশিত: ১:১১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২০

এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা সংশোধনী চুড়ান্তকরণের পরবর্তী সভা আগামী  ১ সেপ্টেম্বর  মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সভাপতিত্বে ইতোমধ্যে আরো কয়েক দফা  এ নিয়ে ভার্চুয়াল  সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা সংশোধনী চুড়ান্তকরণের আগের সভাগুলোতে নীতিমালার কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব বিষয় নিয়ে গত সভাগুলোতে আলোচনা হয়নি সেসব বিষয়ে আগামী সভায় আলোচনা হবে। ৭২ পৃষ্ঠার এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো  চুড়ান্তকরণের সভাসমুহে সবগুলো  বিষয় নিয়ে  আলোচনার পর মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয়দের অনুমোদন সাপেক্ষে সংশোধিত নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।

অনুপাত প্রথা বাতিল,  প্রভাষকদের উচ্চতর স্কেল সংশোধনী, বিএড  স্কেল স্পষ্টীকরণ, প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ সহ প্রশাসনিক পদে আগের যোগ্যতা বহাল , বদলি চালু সহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশোধনীর জন্য এমপিও নীতিমালা সংশোধনী চুড়ান্তকরণের সভার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি রং  পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক।

 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের  দাবিদাওয়ার প্রেক্ষিতে বিদ্যমান নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে।  কমিটি গত জুন মাসে নীতিমালা সংশোধনের সুপারিশ প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে জমা দেয়।

গত  বছরের ১২ নভেম্বর বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিতে ননএমপিও শিক্ষক নেতারাও সদস্য হিসেবে ছিলেন।  এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করতে বলা হয়েছিল এ কমিটিকে। এরপর এ  লক্ষ্যে পাঁচটি সভা করে কমিটি।

পত ৪ ডিসেম্বর এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনে গঠিত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় । এরপর  যথাক্রমে  ১২ ডিসেম্বর, ২২ ডিসেম্বর, ৭ জানুয়ারি  ১১ মার্চ আরো ৪টি সভা অনুষ্টিত হয়। সভাগুলোর আলোচনা নিয়েই এমপিও নীতিমালা সংশোধনের লিখিত সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে বলে  জানিয়েছে  শিক্ষা মন্ত্রণালয় ।

এদিকে এমপিও নীতিমালা – ২০১৮ এর কিছু ধারা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতারা। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের সহ  সভাপতি মোদাচ্ছির আলম বলেন, সহকারী শিক্ষকদের বিএড স্কেল নিয়োগকালীন যোগ্যতাভিত্তিক স্কেল। এটি উচ্চতর স্কেল  হতে পারেনা।  এ নীতিমালার ফলে শিক্ষকরা বিএড প্রশিক্ষণে আগ্রহ হারাবে। তিনি বিএড স্কেলকে আগের মত নিয়োগকালীন স্কেল হিসেবে গণ্য করে এরপর দুটি উচ্চতর স্কেল প্রদানের দাবি জানান।

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল ইসলাম মাসুদ বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের আবেদনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষক/প্রভাষকদের ও আবেদনের সুযোগ ছিল আগের নীতিমালাগুলোতে। বর্তমান নীতিমালায় এ সুযোগ রাখা হয়নি। তিনি প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের আবেদনে পূর্বের ন্যায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষকদের সুযোগ বহাল করার দাবি জানান।

পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষক সমাজের প্রধান সমন্বয়কারী জহিরুল ইসলাম বলেন ,সরকারি কলেজের প্রভাষকরা বিভাগীয় পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকরা জার্নালে প্রকাশনার ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলে ও এমপিওভুক্ত কলেজের প্রভাষকদের মাত্র ২৮ শতাংশকে শুধুমাত্র সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি  দেওয়া হয় । তিনি অনুপাত প্রথা বাতিল করে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদানের জোর দাবি জানান।

বরিশালের বাকেরগঞ্জের বয়োবৃদ্ধ  প্রভাষক রতন কুমার সরকার বলেন, বড় আশা নিয়ে অন্য পেশায় না গিয়ে  শিক্ষকতা পেশায় এসেছিলাম। কিন্তু আজ অবসরের কাছাকাছি এসেও অনুপাত নামক কালো আইনের কারণে সেই প্রভাষক পদেই আছি। অথচ আমার ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই বিভিন্ন বেসরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কিংবা সরকারি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়ে গেছে। তিনি বলেন,অনুপাত  প্রথা বাতিল করে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সকল প্রভাষককে ধাপে ধাপে সহকারী অধ্যাপক , সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে হবে।

কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি জ্যোতিষ মজুমদার  বলেন, বর্তমান নীতিমালায় পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষকদের ১০ বছর পূর্তিতে ৮ম গ্রেড তথা মাত্র এক হাজার টাকা বৃদ্ধির যে নিযম করা হয়েছে, জাতি গড়ার কারিগরদের এর দ্বারা চরমভাবে অপমান করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে গ্রেড প্রভাষকরা ২ বছরে পেতেন সেই গ্রেড ১০ বছর পর কেন? তিনি অবিলম্বে এ বিধান বাতিলের দাবি জানান।

বদলি আন্দোলনের সমন্বয়ক রবিউল ইসলাম বলেন , বদলি না থাকায় নিজ জেলার বাইরে চাকুরিরত শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।  তিনি বদলির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ন করে অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান।


Categories