২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৬ তম বার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২০

শোকাবিহূল জাতি  শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আজ ইতিহাসের ভয়াবহতম হামলা ১৬ তম বার্ষিকী পালন করবে। প্রায় দেড় দশক আগে ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু  অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নাটকীয় গ্রেনেড হামলা

অভিযোগ রয়েছে, মূলত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে বিএনপি- জামাত তথা চারদলীয় জোট সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে  নৃশংসতা গ্রেনেড  হামলা চালায়।

 

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা অল্পের জন্য এই ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেল আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান ও অপর ২৪ জন নিহত হন। এছাড়া এই হামলায় আরো  ৪০০ জন আহত হন আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

 

হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ২১ আগস্ট শান্তি সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ পর্যায়ে আকস্মিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ভয়াবহ মৃত্যু ও দিনের আলো মুছে গিয়ে  ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাৎক্ষণিকভাবে এক মানব বলায়  তৈরি করে। নিজেরা আহত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন।

 

মেয়র হানিফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও  গ্রেনেডের স্পিন্টার  শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ।এদিকে শেখ হাসিনা গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেল তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী ল্যান্স  কর্পোরাল মাহবুব রশীদ , আবুল কালাম আজাদ , রোজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার,  আতিক সরকার, আব্দুল কুদ্দুস পাটোয়ারী,   আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম ,বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা , রতন শিকদার, লিটন মুনশী , হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম , রফিকুল ইসলাম  (আদা চাচা  ), মোশতাক     আহমেদ সেন্টু ,মো. আবুল কাশেম, জাহেদ আলী ,  মোমেন আলী,  এম শামসুদ্দিন এবং ইসহাক মিয়া।

 

মারাত্মক আহতরা হলেন,শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু , প্রয়াত  আব্দুর রাজ্জাক ,প্রয়াত   সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ,ওবায়দুল কাদের  মোহাম্মদ হানিফ , প্রয়াত   অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন , আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ,নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, ,মাহবুবা পারভীন,   এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল ,নাসিমা ফেরদৌস  সাহিদা   তারেক  দীপ্তি , রাশেদা আক্তার রুমা ,  হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুনা ইসলাম ,কাজী মোজাম্মেল  হোসাইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।

 

অভিযোগ আছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিকারের ব্যপারে তৎকালীন বিএনপি সরকার নিলিপ্ত ভূমিকা পালন করেছিল। শুধু তাই নয় ,এই হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে সরকারের কর্মকর্তারা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত পাঁচটি গ্রেনেড ধ্বংস করে দিয়ে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

 

:পরবর্তী সময়ে –

বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ঘটনার সঙ্গে তারেক রহমান জড়িত আছে বলে দাবি করে বলেন ,সাবেক প্রধানমন্ত্রী বড় ছেলে তারেক রহমান এ হামলার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন।

এ হামলা সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর সন্ধানদাতা জন্য সে সময় বাবর এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন ।হামলার পর বাবর এর তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামের এক ভবঘুরে একজন, ছাত্র একজন, আওয়ামী লীগের কর্মী সহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়  অথচ পরবর্তী সময়ে তদন্তে তাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনুকূল পরিস্থিতি সরকার এ হামলা পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিলেন এবং সাড়ে তিন বছর পর বিলম্বিত পুলিশ চার্জশিট নথিভূক্ত করা হয় ।অথচ বিএনপি’র সংসদ সদস্য এই জঘন্য হামলাকে আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত হামলা বলে দাবি করেছিলেন।

পুনরায় তদন্তে পুলিশ এই হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ জনকে চিহ্নিত করে। এর আগে বেশ কয়েকটি বিদেশিমিশন যেমন ব্রিটিশস্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ইউ ‌এস ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই ) এবং ইন্টারপোল বাংলাদেশ তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগ দিলো বিএনপি সরকার তাদের সহযোগিতা করেনি বলে এসব প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ করেছিল।

চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারের আদালতে রাষ্টপক্ষে প্রধান কুশলী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন ,এ মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে সাক্ষ্য তথ্য-প্রমাণে দেখেছি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে  তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জঙ্গি গোষ্ঠীর সহায়তা নিয়ে ইতিহাসের অন্যতম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি আরো বলেন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির সঙ্গবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা এবং “বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যায় ছিল ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য।”

‘”যুদ্ধে ব্যবহৃত সমরাস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র মানুষ এবং কোন রাজনৈতিক দলের সমাবেশে হামলার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।”

অ্যাটনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন , আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার আদালতের রায় বিষয়ে আপিন ও ডেথ  রেফারেন্স শুনানি উচ   আদালতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হবে। তিনি বলেন,  মামলাটির গুরুত্ব উল্লেখ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির আবেদন করা হবে।শুনানির জন্য একটি ব্রাঞ্চে পাঠানো হয় ।বিচারিক আদালত আসামিদের যে  সাজার   রায় প্রদান করেছেন, তা যেন বহাল থাকে। :উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিষ্ঠিত থাকবে বলে জানান তিনি।'”

সুপ্রিম কোটের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, ‘২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।”

১৬ আগস্ট পেপারবুক সুপ্রিম কোর্ট পৌঁছেছে জানিয়ে সাইফুল রহমান বলেন ,২১আগস্টের  ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় ১৩ ভলিউমে মোট ৫৮৫ টি পেপার বুক এসেছে,যা সাড়ে১০ হাজার পৃষ্ঠা ।মোট আপিল ২২ টি ও জেল ‌‌আপিল ১২ টি।


Categories