শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ ও শিক্ষার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি

প্রকাশিত: ১২:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২০
উন্নত জাতি গঠনে দরকার শিক্ষা, আর জাতি উন্নত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। তাই টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। স্বাধিনতার সুবর্নজয়ন্তীর সময় হয়ে আসলো, দেশ উন্নয়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতার পালাবদলও হলো অনেক । আসলে দেশ কি পেল জাতী হিসাবে আমরা কোথায় আছি? কেমন আছি? এসব এখন হিসাব করা দরকার । সঠিক হিসাব কষতে না পারলে হয়তো আমরা ছিটকে পড়বো ডাস্টবিনে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে পিছনে পরতে হবে এটাই স্বাভাবিক। দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সময় উপযোগী নয় তাই আমরা দিন দিন অদক্ষ জাতিতে পরিণত হচ্ছি। দেশের শিক্ষার সাথে কর্মের মিল না থাকায় কর্মদক্ষতা যেমন হ্রাস পাচ্ছে তেমনি কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। লক্ষ্যস্থির করতে না পারায় আমরা সঠিক কাজ করতে অসমর্থিত। দেশের বেকার সমস্য তিব্রতর হয়ে উঠছে। কাজের অনেক সুযোগ থাকলে ও কর্মদক্ষতা না থাকায় তার সুফল আমরা পাচ্ছি না। বর্তমানে দেশের অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হলেও সঠিকভাবে হচ্ছে না তার রক্ষনাবেক্ষন। ফল অল্প সময়েই তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার উন্নয়ন হলেও সঠিক ব্যাবস্হাপনার অভাবে কমছে না যানযট, দুর্ঘটনা, বেহাল রাস্তার দর্ভোগ। এর পিছনে অন্যতম কারন আমাদের দেশের রাজনৈতিক অদক্ষতা । আর অদক্ষ রাজনীতিতে যোগ্য ও শিক্ষিত লোকের কদর কম হওয়াই রাজনীতি দিনদিন হারাচ্ছে যোগ্য ও দক্ষ কর্মি। রাজনীতি হয়ে গেছে পৈতৃক সুত্রে পাওয়া সম্পত্তি। বর্তমানে রাজনীতি কে পেশা হিসাবে গ্রহন করায় আয়ের উৎস হিসাবে চলছে চাঁদাবাজি, লুটপাট, ক্যসিনো , অবৈধ দখল, টেন্ডারবাজি, তদবির , ঘুষবানিজ্য সহ সীমাহীন দুর্নিতি। কারন তাদের বিকল্প আয় নাই। তাই দরকার পেশা নয় সেবার কর্মি যারা ভবিষ্যতে রাজনীতিকে সুসংহত করতে পারবে। দেশের টেকসই উন্নয়ন নিয়ে তারা কাজ করবে। শিক্ষানীতি সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া আমদের শিক্ষার মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বাজেট হচ্ছে প্রতিবছর ব্যয় ও বাড়ছে, ভবন হচ্ছে টেবিল, চেয়ার বেঞ্চ হচ্ছে কিন্তু সে মানের শিক্ষক শিক্ষার্থী কোনটাই হচ্ছে না । কারন শিক্ষার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশে বর্তমানে তিন টি ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা পরিচালিত । সরকারি, বেসরকারী , প্রাইভেট ফলে শিক্ষার বেহালদশা দিন দিন বাড়ছে, কমছে না। দেশের ৯৭% শিক্ষা বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয় । অথচ এবৃহৎ অংশ শিক্ষাব্যবস্থার বৈষম্য আকাশসম। অবকাঠামো, যোগ্য শিক্ষক, বেতন ভাতা, সহ নানাবিদ সমস্যায় জর্জরিত এ খাত। গ্রাম ও কৃষি নির্ভর দেশে স্বল্প ব্যয়ে শহরের ধনঢ্য পরিবারের ছেলে মেয়ে লেখাপড়ার সুযোগ থাকলেও এ সুযোগ নাই গ্রামের কৃষক দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের। ফলে একই দেশে বসবাস করে শিক্ষার মত মৌলিক অধিকারের সমান সুযোগ পাচ্ছে না। আর অবস্হা চলতে থাকলে বহুল প্রত্যাশিত গ্রাম হবে শহর তা বাস্তবায়ন করতে হয়তো আরও ১০০ বছর লাগবে। এম ডি জি, এস ডি জি যে লক্ষ্যে ই আমরা পৌছাতে চাই এর জন্য দরকার সঠিক মানসম্মত শিক্ষা। দক্ষ জনশক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি, স্বনির্ভর দেশ গড়তে একমাত্র শিক্ষাব্যবস্হার উন্নয়নই এর সঠিক সমাধান। সকল নাগরিকের শিক্ষার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেবার সময় এসেছে। এখনই শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিক্ষাব্যবস্থা কে ঢেলে সাজানো দরকার । আর এজন্য প্রথম কাজ হলো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করন। এর পর প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গুলো রেখে দুর্বল প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ করে শিক্ষক কর্মচারীদের বদলির মাধ্যমে চাকুরি ঠিক রেখে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে একই মানে পরিনত করা। এবং বাস্তব ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা । এব্যবস্থায় শিক্ষার মান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি ব্যয় ও হ্রাসপবে । বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে দেশের জনশক্তি হবে জনসম্পদ। শিক্ষায় আসবে সবচেয়ে মেধাবীরা ফলে দেশের টেকসই উন্নয়ন হবে দ্রুততম সময়ে। তাই দেশের সুষম উন্নয়ন ও বৈষম্য দুর করতে শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।
লেখক:
জি, এম শাওন
যুগ্মমহাসচিব,
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম।
Chat Conversation End

Categories