“শিক্ষকদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত”

শিক্ষকদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত- কবি সুলতান আহমেদ সোনা।
দৈনিক আমাদের ফোরামঃ আসব।
কবিঃ হ্যাঁ আসো।
আমাদের ফোরামঃ কেমন আছেন আপনি?
কবিঃ আলহামদুলিল্লাহ্। তুমি?
আমাদের ফোরামঃ তার কৃপায়। বজ্রকথায় আপনার লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘নদী জল কষ্ট’ নিয়ে আমার একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। এবার বজ্রকথা সম্পর্কে বলুন।
কবিঃ বজ্রকথা একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। ১৯৯৪ সালের ০৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আত্মপ্রকাশ পায়। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সাহিত্য-সংস্কৃতি, সুর-সঙ্গীতের মাধ্যমে সুস্থ্য বিনোদন দান, সমাজের বিভিন্ন অসংগতি, জনপ্রিয় কলাম প্রভৃতি বিষয়ে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আমাদের ফোরামঃ আপনি তো কবি। কবিতার পাশাপাশি আর কি করেন?
কবিঃ আমি সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, চিত্র পরিচালক এবং বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পদে যুক্ত আছি। ‘গেটলক’ এবং ‘রঙ্গের পিরীতি’- নামে দুটি অডিও-ভিডিও অ্যালবাম বর্তমানে বাজারে চলছে। তোমার মনে আছে কিনা জানিনা, ‘রঙ্গের পিরীতি’ অ্যালবামে তুমিও আমার লেখা একটি গানে দিয়েছিলে। এছাড়া ‘নদী-জল-কষ্ট’, ‘সুনামি’ সহ বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। রিপ্রিন্টের জন্য কয়েকটি বই অপেক্ষমান আছে।
আমাদের ফোরামঃ আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আপনি কোলকাতা সফর করেছেন। এ সম্পর্কে বলুন।
কবিঃ হ্যাঁ। ঠিকই শুনেছ। কোলকাতা সফর আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার ইচ্ছে দুই বাংলার কবিদের একসূত্রে গাঁথা। ইনশাল্লাহ্ আমি অনেকটা সার্থক।
আমাদের ফোরামঃ অবশ্যই। আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি। কিছুদিন আগে গোটা পীরগঞ্জ দুই বাংলার কবির মিলন-মেলায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল। তো, আপনার কি কোনো স্বপ্ন আছে এগুলোকে ঘিরে?
কবিঃ অবশ্যই আছে। আমার স্বপ্ন হচ্ছে- পীরগঞ্জের এই মাটিকে গোটা বিশ্বের কবি-সাহিত্যিকদের পদচারণার ঘাটি হিসেবে তৈরী করা। তুমি দেখে নিও, একদিন বিশ্ব সাহিত্য দরবারের নামী-দামী সাহিত্যিকগণের পদধুলিতে ধূসরিত হবে এই পীরগঞ্জের মাটি। হয়ত আমি থাকবনা। কিন্তু আমার সৃষ্টি আমার আমানত হয়ে থাকবে।
আমাদের ফোরামঃ আপনি সৃজনশীল চিন্তাধারার মানুষ। এ লক্ষ্যে আপনার চিন্তার কথা বলুন।
কবিঃ আমার প্রাথমিক ভাবনাটা এরকম, আমি এই পীরগঞ্জে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র গোছের একটা ভবন নির্মান করতে চাই। যার নাম হবে ‘বিশ্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্য কেন্দ্র’ (World Culture and Literary Centre- WCLC). ভবনটা হবে এরকম (একটা কাগজ বের করে নকশা এঁকে দেখালেন)। সেখানে সারা বিশ্বের কবি-সাহিত্যিকদের মিলন-মেলা হবে। এছাড়াও আমরা স্কুল ও কলেজ পর্যায়েও সাহিত্য চেতনা বিকাশের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টিও চিন্তা করছি। অবশ্য মোটামুটি একটা কমিটিও গঠন করেছি। এফসাকল (AFSACL) নামে একটি সংগঠন এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
আমাদের ফোরামঃ এফসাকল (AFSACL) সম্পর্কে আমাদের একটু ধারনা দিন।
কবিঃ এফসাকল (AFSACL); Association For South Asian Culture & Literature – একটি মিশন যার লক্ষ্য দেশে দেশে শান্তি-মৈত্রী-বন্ধুত্ব-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা। এর সদস্যদের কাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, শান্তি, মানবতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বকে বাসযোগ্য করার অঙ্গিকার করা। অর্থাৎ, এফসাকল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহবান জানাচ্ছে। সেই সাথে সারা দুনিয়ার লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পি, সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতি এফসাকল শান্তি পদযাত্রায় সামিল হওয়ার ডাক দিয়েছে।
আমাদের ফোরামঃ এই যে এত বড় একটা প্রজেক্ট। নিশ্চই মোটা অংকের একটা টাকা আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে (হচ্ছে)। এ বিষয়ে আপনার ভাবনার কথা বলুন।
কবিঃ (মুচকি হেসে)- একটু বিপদে ফেললে। শোনো, আগের দিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হত মানুষের দানে। দাতার কোনো অভাব ছিলনা। তারা কেউ জমি, কেউ টিন, কেউবা অর্থ এমনকি কেউ কেউ কায়িক শ্রম দিয়েও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উপাসনালয়, মসজিদ, মন্দির, মক্তব, টোল পাঠশালা, ডাক্তার-খানা ইত্যাদি। এখনও এমন মানুষ আছেন। তবে যদি একান্তেই না হয়…। সবচেয়ে বড় কথা হল, টাকা-পয়সা থাকলেই মানুষ ভালো কাজ করতে পারেনা। ভালো কাজ করার জন্য সর্বপ্রথম একটা ভালো মন থাকা দরকার। আমি তো একটা মানুষ, আমার স্বপ্ন অনেক! এটা আমার স্বপ্ন পূরণের দুঃসাহস বলতে পার। মনে রাখবে, স্বপ্ন সেটাই যার পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমোতে দেয়না। আমার বেলাতেও ঠিক তাই।
আমাদের ফোরামঃ টোল-পাঠশালার কথাই যখন আসল, তখন সরকারী এবং বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরাজমান বৈষম্য দূরীকরণ সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?
কবিঃ আমি বুঝতে পেরেছি। তুমি শিক্ষক মানুষ তো! আমি মনে করি একই দেশে দুই শিক্ষানীতি থাকতে পারেনা। সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে এক কেন্দ্রিক। একই নিয়মে চলতে হবে। এমনটি না হলে শিক্ষায় একটা বিশাল শূণ্যতার সৃষ্টি হবে। আর জাতীয়করণ যেমন এখন সময়ের দাবী তেমনি আধুনিক শিক্ষাও কিন্তু আমাদের দাবী। সব মানুষকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, এর পক্ষে কিন্তু আমি নই। তবে সব মানুষের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজন যে আছে, এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। আমি লেখা-পড়া করলাম বাংলায় আর উচ্চ শিক্ষা লাভ করে পেশায় হলাম ডাক্তার, এটা তো কাম্য নয়। কাজেই শিক্ষার সাথে পেশার যেন একটা মিল-বন্ধন থাকে আমি সেটাই প্রত্যাশা করি। সেই সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন বেকার খাপানোর বা ছাপানোর জায়গায় পরিণত করা নয়, সেই দিকটাতেও সতর্ক হতে হবে। মেধাবীরা যাতে এই পেশায় সম্পৃক্ত হতে পারে সে ব্যবস্থা ও পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। আমরা বেকার কিংবা সন্ত্রাসী বানানো শিক্ষা চাইনা, আমরা চাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুশিক্ষা। অবশ্য এজন্য শিক্ষকদের সন্তুষ্ট রাখার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ সরকারকে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। জাতীয়করণ তো অবশ্যই। (প্রাণখোলা হাসি দিয়ে) এটার পক্ষে কিন্তু আমিও। এটা আমারও ইচ্ছে।
আমাদের ফোরামঃ মহান আল্লাহ্ আপনার স্বপ্ন পূরণে সহায় হউন। সময় দেবার জন্য দৈনিক আমাদের ফোরাম পত্রিকার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কবিঃ তোমাকেও।
সাক্ষাতকার গ্রহণ ও গ্রন্থনাঃ এ টি এম আশরাফুল ইসলাম সরকার রাংগা।
N.B: [প্রমাণপত্র (Testify to)- অডিও রেকর্ড]।