“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে আবেদন- সর্বস্তরে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বহাল করা প্রয়োজন”

কোনো জাতিকে একটি সুনির্দিষ্ট আর্দশের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হলে সে জাতিকে অবশ্যই নৈতিক ও আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
সেই আদর্শ শিক্ষার ঘাটতির ফলেই মুসলিম জাতি আজ সমগ্র বিশ্বে পদে পদে বিপর্যস্ত। সেই হারানো ঐতিহ্য, সেই আদর্শ সমাজ, সকল জাতির শান্তিকারী আর্দশিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানুষ গড়তেই আজ প্রয়োজন সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। একমাত্র ইসলামি ও নৈতিকতার শিক্ষার মাধ্যমেই বিশ্ব অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানবতার কল্যাণ।
“হে নবী আপনি বলে দিন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা উভয়ে কি কখনো সমান হতে পারে? বুদ্ধিমান লোকেরাই তো চিন্তা ভাবনা করে গ্রহণ করে” (সুরা যুমার ৩৯ : ০৯)
জ্ঞান হলো শিক্ষার মূলভিত্তি। ইসলাম বিবর্জিত জ্ঞান দিয়ে শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তোলা হলে আদর্শ ও নৈতিকতার খুঁটি নড়বড়েই থেকে যায়। আদর্শ আর নৈতিকতার বিকাশ করেই একটি শিক্ষিত, সফল ও উন্নত জাতিসত্তা গড়ে উঠতে পারে।
দার্শনিক ড. আল্লামা ইকবাল বলেন,“খুদী বা আত্মার উন্নয়ন ঘটানোর প্রক্রিয়াই হলো শিক্ষা”।
ড. জন পার্কের মতে, “শিক্ষা হচ্ছে নিদর্শন ও অধ্যয়নের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন বা প্রদানের কৌশল তথা প্রক্রিয়া”।
জন মিল্টন বলেন, আমি ঐ শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গ ও উদার শিক্ষা বলি, যা একজন মানুষকে তৈরি করে, ব্যক্তিগত বা সরকারি দায়িত্ব ন্যায় সংগতভাবে, দক্ষতাসহকারে এবং উদারভাবে প্রতিপালন করতে।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হলো আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। কোনো শিক্ষিত মানুষের আচরণে মনুষ্যত্ব খুঁজে না পাওয়া গেলে অথবা তার মানবিক আচার আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার শিক্ষাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। একাডেমিক পড়ালেখায় ইসলাম এবং নৈতিকতার শিক্ষা না থাকলে পড়ালেখা শেষে একদল সার্টিফিকেটধারী প্রাণী শিক্ষাঙ্গন ত্যাগ করলেও ব্যক্তিজীবনে এবং সামাজিক জীবনে তারা মনুষ্যত্বের ধারক ও বাহক হতে পারে না। ফলে পরীক্ষায় পাশের সাথে মানবিক গুনাবলী সমৃদ্ধ আদর্শ মানুষের সংখ্যার পার্থক্যটা দিন দিন বাড়তেই থাকে।
আজ বাংলাদেশের জনগণ নৈতিকতা হীনতার যে ভয়ঙ্কর আশঙ্কা ও ভীতিপূর্ণ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ছিনতাই, ধর্ষন, কালোবাজারি, ঘুষের মতো মারাত্মক অপরাধ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। অফিসের বড় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বয়-বেয়ারা পর্যন্ত প্রায় সকল স্তরের অনেক কর্মচারী দূর্নীতিগ্রস্থ। স্বামীর সামনেই তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে ধর্ষণ, বাবার লাশের জন্য বসে থাকা মেয়েকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধি শিশু ধর্ষণ, হত্যার মতো নৃশংস ও মর্মান্তিক খবর প্রতিনিয়তই খবরের কাগজে দেখতে পাচ্ছি। শিশুকন্যা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এমনকি বৃদ্ধারাও গুন্ডা কর্তৃক ধর্ষিত হচ্ছে। যুবতী মেয়েরা সতীত্ব রক্ষার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হচ্ছে। স্কুলে কলেজের ছাত্ররা সিগারেটের নেশাকে ফ্যাশন মনে করছে। নৈতিকতার এ বিপর্যয় যেন আইয়্যামে জাহিলিয়াতকেও হার মানাচ্ছে।
এ বিষর্যয় থেকে উদ্ধার হওয়ার উপায় সম্পর্কে একটু নিরপেক্ষ মন নিয়ে ভেবে দেখলে সকলেই একথা স্বীকার করে যে ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। আর নৈতিকতা মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে। দেশের বিভিন্ন মদের আড্ডাখানা, পতিতাদের পতিতা পাড়া, সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীদের আসর, ধর্ষকদের দল ইত্যাদি অপরাধের অপরাধীদের আড্ডাখানায় যাদের পাওয়া যায় তাদের মধ্যে মাওলানা/মৌলভী বা ইসলাম চর্চা করে এমন কাউকে দেখা যায় না।
ইসলামের মূলনীতি শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা মৃত্যুর যন্ত্রনা, কবরের আযাব, হাশরের ময়দান, পার্থিব জীবনে কৃতকর্মের হিসাব দান, পাপ-পূণ্যের বিচার, বেহেস্তের সুখ-শান্তি ও দোজখের ভয়ংকর শাস্তি সম্পর্কে অধ্যয়ন করে খোদাভীরু, উন্নত চরিত্রের অধিকারী সৎ ও নিষ্ঠাবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
মালয়েশিয়া এ ইরানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পর্যন্ত সকল মুসলিম শিক্ষার্থীর জন্য ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাধ্যতামূলক ভাবে চালু আছে। আমাদের দেশেও বর্তমানে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করার দাবি উঠেছে।
বিশ্ব মানবতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় নৈতিক গুনাবলী সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তোলার একমাত্র পন্থা হলো সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে চলা। আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরাআনে বলেন : “নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য একমাত্র জীবনাদর্শ।”
আইন অনুশাসন যে সমাজকে পরিচালনা করে নৈতিকতা আর আদর্শ সে সমাজকে দীপ্তিময় করে তোলে। আদর্শ আইনের প্রতি গভীর অনুরাগ থাকলেই কেবলামাত্র আদর্শ মানুষ হওয়া যায়। আদর্শ শিক্ষা দেওয়ার সর্বোত্তম সময় হলো স্কুল কলেজের শিক্ষাজীবন। কেননা আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের শিক্ষক হবে, নেতা হবে, নীতিনির্ধারক হবে। কাজেই, পূণাঙ্গরূপে আদর্শ মানুষ হওয়ার প্রধান ও একমাত্র শর্ত হলো ইসলামি ও আদর্শিক জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে সর্বদা জ্ঞানোম্মুখ হওয়া সে অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করার পাশাপাশি অন্যদের কল্যাণে নিজেকে পেশ করা এবং সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উপনিত হওয়া।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বিষয় হলো বর্তমান শিক্ষাক্রম অনুসারে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি আবশ্যিক না হওয়ায় মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীর ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি পড়লেও বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ নাগরিক মুসলমান। ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি উচ্চ মাধ্যমিক সহ সকল স্তরে আবশ্যিক করা হলো কোনো মুসলিম শিক্ষার্থী ইসলাম সম্পর্কে জানার ও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না।
দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্মলিত মডেল মসজিদ নির্মানের জন্য আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ইসলাম সম্মেলনে ঘোষনা করেন যে, “দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা আধুনিক সুযোগ সম্বলিত একটি করে মসজিদ নির্মান করবো, ইনশাআল্লাহ। প্রকল্পটি ইতোমধ্যে বাস্থবায়নের পথে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট মসজিদ নির্মানের পাশাপাশি সর্বোস্তরে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জোর দাবি জানচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে এদেশে ইসলাম শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক সহ সকল স্তরে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে ইসলাম প্রচারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সৎ চরিত্রবান ও নিষ্ঠাবান গড়ে তুলে সমাজের সর্বস্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন পূরণে অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। ইসলাম শিক্ষা বিষয়টিকে সকল স্তরে বাধ্যতামূলক করে দেশের সকল শিক্ষার্থীদের ইসলামের আদর্শ জেনে, বুঝে ও মেনে নিজেদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ দান করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সমীপে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
লেখক: মোঃ আবদুর রহমান
সহ. বার্তা সম্পাদক
দৈনিক আমাদের ফোরাম ও
উপাধ্যক্ষ, রোকনউদ্দিন মোল্লা গালর্স ডিগ্রী কলেজ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।
(মোবাইলঃ ০১৭১১-০৭৪৮০২)