বিপিএল: চতুর্থ হাসি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের।

প্রকাশিত: ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরের প্রথম তিন ম্যাচেই হেরেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের শেষ চারে ওঠা নিয়েই তো জেগেছিল সংশয়। কিন্তু টুর্নামেন্ট শেষে শিরোপা তাদের।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অপ্রতিরোধ্য যে জয়যাত্রা সেটা ফাইনালেও অব্যাহত থাকল। আজ মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্সকে সাত উইকেটে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জিতল কুমিল্লা। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে কুমিল্লা স্বাদ পেল ব্যাক টু ব্যাক শিরোপার। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ওভারে সাত উইকেটে ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর সংগ্রহ তোলে সিলেট স্ট্রাইকার্স। জবাবে তিন উইকেট হারিয়ে চার বল হাতে রেখেই ফাইনাল জিতে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেষ দুই ওভারে ২১ রানের যে কঠিন সমীকরণ সেটা কুমিল্লা মিলিয়ে ফেলল সহজেই। তাতে করে বিপিএল পেল না নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দলকে।

ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটের শুরুটা ছিল বাজে। ২৬ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে বসে তারা। পরে মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে সিলেট পায় লড়াইয়ে রসদ। ৪৫ বলে ৬৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে আউট হন সিলেট ওপেনার শান্ত। এই ইনিংস খেলার পথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিপিএলে ৫০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি।

৪৮ বলে ৭৪ রানের দারুণ ইনিংসে অপরাজিত থাকেন মুশি। এ ছাড়া ১১ বলে ১৩ রানে আউট হন রায়ান বার্ল। শেষ পর্যন্ত বিফলে গেল শান্ত-মুশিদের দারুণ ব্যাটিং। দুজনকে ম্লান করে দেন কুমিল্লা ওপেনার লিটন দাস ও দলটির ক্যারিবীয় ব্যাটার জনসন চার্লস। শেষ দিকে জয়ের ক্যানভাসে তুলির আঁচড় দেন মঈন আলিও।

কুমিল্লার ইনিংসের শুরুতে দ্রুতগতিতে রান তুলতে হিয়ে ৩১ রানের মধ্যে প্রথম দুই উইকেট হারায় তারা। পরে চার্লস ও লিটনের ঝোড়ের ব্যাটিংয়ে জোড়া ধাক্কা সামলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। এই দুজন পার করেন দলীয় শতক। তাদের ৭০ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন হয় লিটনের বিদায়ে। ৩৯ বলে ৫৫ রানে আউট হন কুমিল্লা ওপেনার।

লিটনের বিদায়ের পর মঈনকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৭২ রানের অপরাজিত জুটি গড়েন চালর্স। এই জুটিই কুমিল্লাকে পৌঁছে দেয় স্বপ্নের ঠিকানায়। চার্লস ৫২ বলে ৭৯ এবং মঈন ১৭ বলে ২৫ রানের ইনিংসে অজেয় থাকেন। তবে প্রত্যাশিতভাবেই ফাইনাল সেরা হয়েছেন ক্যারিবীয় ব্যাটার।

চলতি বিপিএলের মঞ্চে ব্যাট হাতে স্বপ্নের মতো সময় কাটিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা, এই ক্রিকেটারকে নিয়ে করা একের পর এক ট্রলের পরও দমে যাননি শান্ত। বরং শোককে পরিণত করেছেন শক্তিতে।

টুর্নামেন্ট চলাকালীন মাঝপথেই খুব দুঃখ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি বোধহয় দেশের বিরুদ্ধে খেলি।’ সে শান্তর যাই মনে হোক না কেন, সমালোচনার জবাব ব্যাট হাতে সঠিকভাবেই দিয়েছেন এই জাতীয় দলের ওপেনার।

এবারের বিপিএলের মঞ্চে সর্বোচ্চ রান করেছেন শান্ত। তাও রীতিমতো ৫১৬ রান। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রনি তালুকদারের চেয়েও ৯১ রান এগিয়ে শান্ত। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে থাকার কারণে ৫ লক্ষ টাকা জিতে নিয়েছেন এই ক্রিকেটার। কেবল সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের প্রাইজমানি নয় শান্ত জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও।

এবারের আসরে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে শান্তর সঙ্গে ছিলেন সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন, তানভীর ইসলামরা। তবে সবাইকে পেছনে ফেলে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচশ রানের মাইলফলক পেরিয়ে শান্তই জিতে নিয়েছেন ১০ লাখ টাকার সেই কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার।

টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে শান্ত বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, টিম ভালো খেলেছে। কিন্তু দিনটি আমাদের ছিল না। যদিও আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ভালো খেলেছি। ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি প্রত্যেক ম্যাচেই ভালো খেলতে চাই। এই টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে পেরেছি।’

ফাইনালের সেরা হয়ে চার্লস বলেন, ‘আমি মনে করি এটা ২০০ রানের পিচ। কিন্তু আমাদের সামনে লক্ষ্য ছিল ১৭০। আমি জানতাম যদি শেশ ওভার পর্যন্ত খেলা যায় তবে আমরাই জিতবো। হ্যাঁ, আমাদের ব্যাটিং গভীরতা ছিল অনেকদূর পর্যন্ত। লিটন এবারের টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেছে। সে ক্লাসিক ঘরানার ব্যাটসম্যান।’

এছাড়াও টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন দুইজন। যথাক্রমে কুমিল্লার তানভীর ইসলাম এবং রংপুর রাইডার্সের হাসান মাহমুদ। দুইজনেই সমান ১৭টি উইকেট করে সংগ্রহ করেছেন। তার দুইজনেই জিতেছেন সমান পাঁচ লক্ষ টাকা করে। এছাড়াও সেরা ফিল্ডার হিসেবে তিন লক্ষ টাকা পেয়েছেন মুশফিকুর রহিম। তিনি উইকেটের পেছনে ১৪টি ডিসমিসাল করেছেন।

প্লেয়ার অব দ্য ফাইনাল: জনসন চার্লস (পাঁচ লক্ষ টাকা)। সেরা ফিল্ডার: উইকেটের পেছনে ১৪টি ডিসমিসালের জন্য মুশফিকুর রহিম। (তিন লক্ষ টাকা)। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি: হাসান মাহমুদ এবং তানভীর ইসলাম, ১৭ উইকেট। (পাঁচ লক্ষ টাকা প্রত্যেকেই)। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক: নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫১৬ রান (পাঁচ লক্ষ টাকা)। প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট: নাজমুল হোসেন শান্ত। (দশ লক্ষ টাকা)।

বিপিএলের এবারের আসর শুরুর আগেই ঘোষণা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন প্রাইজমানি দ্বিগুণ করেছে গভর্নিং কাউন্সিল। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে অন্য সব পুরস্কারের আর্থিক অঙ্কও। সব মিলিয়ে ফাইনালের দিন দেওয়া হয়েছে প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকার পুরস্কার।

পরপর দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ট্রফির পাশাপাশি পেয়েছে ২ কোটি টাকার অর্থ পুরস্কার। রানার্স আপ হওয়া সিলেট স্ট্রাইকার্সের ঘরে গেছে ট্রফির সঙ্গে ১ কোটি টাকা।

পুরো আসরে দারুণ খেলে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পুরো আসরে ৪ ফিফটিতে ৫১৬ রান করে তিনি পেয়েছেন ১০ লাখ টাকা। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পুরস্কার ৫ লাখ টাকাও জিতেছেন তিনি।

ফাইনাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ৫ লাখ টাকা নিজের করে নিয়েছেন জনসন চার্লস। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কুমিল্লাকে শিরোপা জেতানোর ম্যাচে ৭ চার ও ৫ ছয়ে ৫২ বলে ৭৯ রান করেছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান।

সর্বোচ্চ উইকেটের ৫ লাখ টাকা পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের তানভির ইসলাম ও তৃতীয় হওয়া রংপুর রাইডার্সের হাসান মাহমুদ। ১২ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছেন কুমিল্লার বাঁহাতি স্পিনার। হাসান ১৪ ম্যাচে পেয়েছেন সমান উইকেট।

সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার জিতেছেন রানার্স-আপ দলের মুশফিকুর রহিম। উইকেটের পেছনে ১৪টি ডিসমিসালের সৌজন্যে ৩ লাখ টাকা পেয়েছেন অভিজ্ঞ কিপার।


Categories