“বর্ষা অবকাশের ঋতু” সাজেদা আকতার

সাজেদা আকতার সাজু

প্রকাশিত: ১:৩৯ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২০
                    ষড়ঋতুর রঙ্গমঞ্চের দ্বিতীয় দৃশ্যে সম্রাটের মতো আবির্ভূত হয় বাংলার প্রকৃতির ঋতু বর্ষা। গ্রীষ্মের তখন অবসান হয়। খাঁ খাঁ রোদের প্রকট থেকে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
রাজকীয় আড়ম্বরে বর্ষার শুভাগমন হয় সুন্দর শ্যামল প্রকৃতিতে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমক আর গুরুগম্ভীর বজ্রধ্বনি তার আগমন বার্তা নিয়ে আসে। আকাশের কোণে জমে থাকে কালো মেঘের স্তুপ। অসাধারণ মোহনীয় সে মেঘের স্তর বিন্যাস। বায়ু প্রবাহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রবল বেগে ধেয়ে আসে। শুরু হয় দুরন্ত বর্ষণ। ধূসর ক্লান্তি মুছে দেয় মাটি তার দেহ থেকে। উদ্ভাসিত হয়ে উঠে সবুজ শ্যামলময় প্রান্তর। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় কানায় কানায় পূর্ণ হয়। মাঠ-ঘাট থৈ থৈ করে পানিতে।
তখন কবি বলেন,
                “নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
                 তিল ঠাঁই আর নাহিরে,
                 ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
পুষ্প বিকাশের ঋতু বর্ষা। বিচিত্র ফুলের বিচিত্র গন্ধে শোভিত হয়ে উঠে প্রকৃতি। কদম,কেয়া, হাসনা হেনা, গন্ধরাজ, জুঁই, বেলীর স্নিগ্ধ আমেজে হৃদয়ের দ্বার খুলে অপরূপ সাজে সেজে উঠে প্রকৃতি।
কালিদাসের কবিতার মতোই বর্ষা আসে। বর্ষা নব যৌবনা। যেখানে আছে বেদনার সুর, আছে বিরহের বাণী। তবুও বর্ষা নতুন জীবনের বার্তা আনে চির মিলনের আশ্বাসে, চির সৌন্দর্যের।
বর্ষা প্রকৃতি মানুষকে ভাবের রাজ্যে নিয়ে যায়। কল্পনার তীর্থভূমিতে কর্মহীন বিলাসে বসবাস করায়। তাইতো বর্ষা নিয়ে এত কবিতা,গল্প, প্রবন্ধ,গান। বর্ষা কাব্যলক্ষ্মীর আশির্বাদে ধন্য- যা অন্য কোনো ঋতু হতে পারেনি।
বর্ষায় আছে অনন্ত অভিসার বাসনা। কবি জয়দেব থেকে শুরু করে বর্তমানের কবিরা বর্ষার বন্দনার মালা গেঁথেছেন অপূর্ব ভঙ্গিমায়। বর্ষা তাই চির সৌন্দর্যের অলকপুরীতে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেছে।
বৈষ্ণব কবিদের ভাষায়,
              ” ভরা-ভাদর, মাহ-ভাদর, শূণ্য মন্দির মোর”
তারা এখানে শূণ্যতার সন্ধান করেছেন।
মঙ্গল কাব্যে বর্ণাঢ্য চিত্র আছে, আছে বর্ষার দুঃখের চিত্র। কবিমন তাই ভাবনার সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চির সৌন্দর্যের অমরাবতীতে যাত্রা করেছেন। বিরহ বেদনা প্রত্যক্ষ করেছেন বর্ষার মধ্যেই।
বর্ষা অবকাশের ঋতু। কবিগুরু বলেন,
                   “এমন দিনে তারে বলা যায়
                    এমন ঘনঘোর বরিষায়।”
কবির দৃষ্টিতে বর্ষা ভাব রাজ্যের অনন্তের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে।
বর্ষা একদিকে নতুন সৃষ্টির আনন্দোৎসব, অন্যদিকে দুর্বার ভেঙে পড়ার প্রলয় নৃত্যের তান্ডবলীলা। এক হাতে মোহন বাঁশি, অন্য হাতে ধ্বংসের শিঙা, বিনাশী অস্ত্র।
বর্ষা আছে বলেই গ্রাম বাংলা এতো মোহনীয়, এতো কমনীয়, এতো মাধুর্যমন্ডিত। সবুজের গালিচায় আচ্ছাদিত। প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে শেষ করে তার বর্ষণ। তারপর হাসিয়ে কাঁদিয়ে পথে পথে কদম কেশরের করুণ শেষ স্মৃতিচিহ্ন এলোমেলো ছড়িয়ে রেখে বিদায় নেয় আমাদের অত্যন্ত প্রিয় ঋতু বর্ষা।
১৮/৬/২০২০

Categories