
জহিরুল হক, বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনা জেলা পরিষদের কর্মচারী জাহিদুল এর রমরমা নলকূপ বাণিজ্য।
বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার ডাক বাংলোতে কর্মরত দারোয়ান কাম-কেয়ারটেকার মোঃ জাহিদুল ইসলাম মাইদুল সরকারি গভীর নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টাকা দিয়েও নলকূপ না পাওয়ায় মোঃ মজিবর খান এ বিষয়ে বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্র প্রদান করেছেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগপত্র হতে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ৮নং সদর ইউনিয়নের দক্ষিন হেউলিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আঃ রব খানের পুত্র মোঃ মজিবর খানের কাছ থেকে জেলা পরিষদ হতে গভীর নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে গত ২০ ফেব্রুয়ারী ও ৩০ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রথমে ১০,০০০ ও পরে ২০,০০০ টাকা গ্রহণ করেন দারোয়ান কাম-কেয়ারটেকার মোঃ জাহিদুল ইসলাম। টাকা গ্রহণের সময় অল্প কিছুদিনের মধ্যে নলকূপ স্থাপনের কথা থাকলেও দীর্ঘ ৬মাস অতিবাহিত হলেও তিনি আজ পর্যন্ত নলকূপ স্থাপন করিয়ে দিতে পারেনি।
অভিযোগকারী হেউলিবুনিয়া গ্রামের মোঃ মজিবর খান বলেন জাহিদুলকে ৩০,০০০ টাকা দিয়েও সরকারি নলকূপ এখন পর্যন্ত পাইনি। কিছুদিন আগে জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত নলকূপের তালিকায় আমার নাম না আসলে আমি তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি বিভিন্নভাবে আমাকে ঘুরিয়ে আরও ০৬ মাস অপেক্ষা করতে বলেন। আমি একটি গরীব পরিবারের লোক। টমটম চালিয়ে কোন রকম পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বেচে আছি। টাকা দেওয়ার সময় দেশে করোনা মহামারী শুরু হয়েছে। গাড়ীও চালাতে পারিনি। বাবা মৃত্যুর আগে একটি ডিপিএস করে রেখে যান। মৃত্যুর পরে ডিপিএসের টাকা উত্তোলন করে নলকূপ পাওয়ার ৩০,০০০ টাকা জাহিদুলের নিকট জমা দেই।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে মোঃ জাহিদুল ইসলামের বরগুনা জেলা পরিষদে দারোয়ান কাম-কেয়ারটেকার পদে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বেতাগী উপজেলার ডাকবাংলোতে কর্মরত আছেন। চাকরির শুরু থেকেই জাহিদুল বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযুক্ত জাহিদুলের সাথে অভিযোগকারী মজিবর খানের মুঠো ফোনে টাকার কথা বলার সময় টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের কাছে জমা আছে। নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার জন্য জাহিদুল ৩০,০০০ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন ভাই টাকা নিয়ে আমি অফিসে দিয়েছি, টাকা তো আর আমি খাই নাই। এটা অফিসের খরচ, টাকা অফিসকে জমা দিয়ে দিয়েছি। আগামী ৬ মাস পরে আমি নলকূপ দিয়ে দিতে পারব।
এ বিষয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অভিযুক্ত জাহিদুলকে মুঠোফোনে টাকা নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।
উল্লেখ্য, সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের মাইঠা (কড়ইতলা) গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী নান্না মীরের পুত্র মামুন মীর গভীর নলকূপ পাওয়ার জন্য ২৭,০০০ টাকা দিয়েও নলকূপ ও টাকা কোনটাই না পেয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ১৪/০৭/২০২০ইং তারিখ ডাকযোগে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে বরগুনার জেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ০৬/০৮/২০২০ তারিখে ২৮নং স্মারকে তদন্ত প্রতিবেদনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওয়াহেদুর রহমান, জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল আলমকে আহবায়ক করে ০৩ সদস্য কমিটি গঠন করে আগামী ০৮/০৯/২০২০ তারিখে সকাল ১১টায় অভিযোগের তদন্ত করবেন বলে জানা গেছে।