প্রসঙ্গ: রেড জোনে লকডাউন

প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২০

বৈশ্বিক করোনা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ক্রমশ মানুষ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। দিশেহারা জনজীবন। অন্যদিকে করোনায় ভেঙেছে বৈশ্বিক অর্থনীতির কাঠামো। ফলে সরকার সচেতনতা বাড়াতে বললেও মানুষ অপ্রতিরোধ্য। শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন কমানো চলছে একাধারে।

কাজের অভাব, খাবারের অভাব মানষের মৃত্যুচিন্তাকে হারিয়ে দিয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড ও এলাকাভিত্তিক সারাদেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ এই তিন অঞ্চলে ভাগ করে লকডাউন করা হবে। ইতোমধ্যে বেশকিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। লাল অঞ্চলে সাধারণ ছুটি থাকবে ১৬ থেকে ৩০ জুন। এসব অঞ্চলে বসবাসকারী কর্মকর্তারাও এই ছুটির আওতায় পড়বেন। হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে সবকিছু।

সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় এ কথা জানানো হয়েছে। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়, লাল অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ও বেসামরিক, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দফতরগুলো এবং এলাকাগুলোতে বসবাসকারী ওই দফতরগুলোর কর্মকর্তারাও সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে যেভাবে অফিস চলছে, হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে অবস্থিত অফিসগুলো ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সেভাবেই চলবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে।

সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকার সময় অর্থাৎ, ৩০ জুন পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহনও চলাচল করতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুরোধ অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অঞ্চল সংক্রান্ত বিষয়াদি সমন্বয় করবে। এতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ (মূলত স্বাস্থ্য বিভাগ) লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকা হিসেবে ভাগ করে জীবনযাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক এলাকার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করতে হবে।

এদিকে, ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বর্তমান সময়ের মতো (৩১ থেকে ১৫ জুনের নিয়মকানুন) নিষেধাজ্ঞাগুলো থাকবে। এখনকার মতো ৩০ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, রেল ও বিমান চলাচল করতে পারবে।

রেড জোন লকডাউনের প্রস্তুতিতে দুই সিটি কর্পোরেশন : সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যেই লাল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত রাজধানীর ৪৫টি এলাকায় লকডাউন শুরু করতে পারবে সিটি কর্পোরেশন। প্রথম অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনে থাকা পূর্ব রাজাবাজারে ত্রাণ প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।

সোনারতরী টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় বাস করা এক গৃহকর্মী জানান, করোনার কারণে অনেক দিন থেকেই তার কাজ নেই। স্বামীরও কাজ না থাকার অবস্থা। এখন ত্রাণ না দিলে তো বাঁচতে পারবেন না। যদিও লকডাউনের মধ্যে স্থানীয় কাউন্সেলর প্রথম দিন ২২ জনকে ত্রাণ দিয়েছেন। পরদিন ৪০ জন। এভাবে প্রতিদিনই বেড়েছে।

গতকাল প্রায় ২০০ জনকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। যারাই ফোন দিচ্ছে তাদের বাসায় স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে- একটি এলাকায় ২০০ জনকে ত্রাণ দেয়া মোটেও পর্যাপ্ত নয়। দরকার সরকারের রেশন দেয়া। ধরা গেল যারা ফোন দেয় তারা খাবার পায়। কিন্তু অজস মানুষ আছে যাদের ঘরে খাবার নেই, তারা মরে গেলেও কাউকে ফোন দেবে না। এসব কথা মাথায় রেখে সরকারের উচিত জরুরিভাবে রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ছাঁটাই বন্ধে নির্দেশ দেয়া বা বছরব্যাপী রেশনিং চালু। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি আমলে নেবে বলে আমাদের ধারণা।


Categories