
একটি দেশ কতটুকু উন্নত তা জানার জন্য সে দেশের বড় বড় দালান কিংবা প্রশস্ত পাকা রাস্তাগুলো গণনার প্রয়োজন হয় না; ঐ দেশের শিক্ষিতের হারই বলে দেয় দেশটি কতটা উন্নত৷ তেমনিভাবে একটি দেশ কতটুকু ডিজিটাল তা জানার জন্য নেটের গতি ও কম্পিউটার গণনার প্রয়োজন নাই; শিক্ষা ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার ও প্রয়োগই বলে দেবে দেশটি কতটুকু ডিজিটাল৷ অনুরূপভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কতটুকু আইসিটিতে দক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানে আইসিটির ব্যাপকতা ও পরিধি ঐ প্রতিষ্ঠান প্রধানের আইসিটি দক্ষতা দেখলেই সেখানকার আইসিটির অবস্থান সহজে বোধগম্য হয়৷
বাংলাদেশের ৯৭% মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি৷ বর্তমানে আইসিটির সর্বাধিক প্রয়োগ ও প্রসার বিস্তার করছে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে, বিশেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মধ্যমনি৷ প্রতিষ্ঠানের এমন কোনো কাজ নাই যা প্রধানকে অবহিত করা বা প্রধানের নির্দেশ ছাড়া সম্পন্ন করা যায়৷ তিনি হলেন প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার শীর্ষে৷
স্বভাবতই যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিজ্ঞানে পারদর্শী সে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বিজ্ঞানে ভালো ফলাফল করে কারণ বিজ্ঞানের শিক্ষকেরাও বেশিবেশি অধ্যয়ণে তৎপর থাকেন৷ একইভাবে আইসিটি ও অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও সে রকমই ঘটে থাকে৷ কিন্তু বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাউস ধরা এবং এন্ড্রয়েট মোবাইল কর্তৃক ফোন রিসিভ করা দেখলেই তিনি আইসিটিকে কত দক্ষ তা বুঝার আর বাকি থাকে না; তাঁর এহেন অবস্থা পুরো প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করে৷ অধিক চাপ প্রয়োগ ও প্রেষণা সৃষ্টি করে যদিও প্রতিষ্ঠানে আইসিটির প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় কিন্তু তা উল্লেখ করার মত কখনোই হবে না যদি প্রতিষ্ঠান প্রধান অধিক দক্ষ না হোন এবং তাঁর সদিচ্ছা না থাকে৷
বর্তমানে কোভিড-১৯ আরো বুঝিয়ে দিয়েছে যে প্রতিষ্ঠান প্রধান আইসিটিতে দক্ষ হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ! লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান আইসিটিতে দক্ষ সে প্রতিষ্ঠানের অনলাইন ক্লাশ চলছে বাস্তবভিত্তিক তরিৎ গতিতে৷ সে প্রতিষ্ঠানে মোটামুটি অনলাইন ক্লাশের সফলতাও পাচ্ছে অফলাইন ক্লাশের মতই৷ আবার যে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অনলাইন ক্লাশ কী বুঝাতে বুঝাতেই আধা ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হয় তিনি এখনো বুঝেন অনলাইন ক্লাশ মানেই যেন ড্যাসবোর্ডে ছবি তোলে ক্লাশ দেয়া! তাঁর এ বুঝার কারণে সে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এখনো প্রাইভেট পড়ানোর জন্য ব্যবহৃত বোর্ডের ছবি দিয়ে এমএমসি ড্যাসবোর্ড ক্লাশ ইনপুট করতে দেখা যায়৷
প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি আইসিটিতে দক্ষ হোন তাহলে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ঘনঘন শিক্ষকদেরকে আইসিটির প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন হবে না৷ প্রতিষ্ঠান প্রধান আন্তরিক হলে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে দক্ষ করতে এবং প্রতিষ্ঠানে শতভাগ আইসিটি কার্যকর করতে তিনিই যথেষ্ঠ৷ প্রতিষ্ঠানের প্রধান আইসিটি দক্ষ মানে প্রতিষ্ঠানে সারা বছর মাষ্টার ট্রেইনার অবস্থান করা৷ প্রশিক্ষণের পরে কত শতাংশ শিক্ষক তা প্রয়োগ করে থাকেন তা সর্বজন জ্ঞাত! কতজন শিক্ষক নিজ থেকে নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী, ভাতাবিহীন একটি প্রশিক্ষণের অায়োজন করলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে৷
কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বারবার প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁকে আশানুরূপ আইসিটিতে দক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না৷ কারন পদ পদবি উন্নয়নের জন্য পেশাজীবীরা যত পরিশ্রম করেন পদবী উন্নয়নের পর স্ব পদের কর্ম উন্নয়নের জন্য তার সিঁকি পরিমাণও পরিশ্রম করেন না৷ এ জন্য ”Prevention is better than cure” রীতিই গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক মঙ্গলজনক হবে৷
শিক্ষা ক্ষেত্রে দ্রুত শতভাগ আইসিটির প্রয়োগ ও এর সুফল পেতে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের পূর্বশর্ত হিসেবে আইসিটি জ্ঞান ও দক্ষতা বাধ্যতামূলক করাসহ নিয়োগে আইসিটির দক্ষতা যাচাইয়ে প্র্যাক্টিকেল ইন্টারভিউ নিতে হবে৷
এজন্য মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার জন্য নির্ধারীত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার পাশাপাশি প্রার্থীকে বাধ্যতামূলক কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয়া যেতে পারে-
১. অফিস, ফটোশপসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম জানা থাকা,
২. মান সম্মত মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট বানানোর দক্ষতা,
৩. অনলাইনে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা ইত্যাদি৷
উপরোক্ত দক্ষতাগুলো শুধু প্রতিষ্ঠানে শুধু শতভাগ আইসিটি কার্যকর করতেই সহায়তা করবে না প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগে দুর্নীতি অনেকাংশে লাঘব হবে৷
সর্বোপরি, এনালগ ঘড়ি দিয়ে ডিজিটাল টাইম দেখা যাবে না এবং ভাঁঙ্গা তরী মেরামত করে দ্রুত সাগর পাড়ি দেয়া যাবে না৷ এ জন্য পূর্বেই দ্রুতগামি স্পীড বোট সংগ্রহে থাকতে হবে৷
শুধু মাত্র সাধারন যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত শতভাগ ডিজিটালাইজেশনের আশা করা যাবে না৷ প্রতিষ্ঠানের নেতা ডিজিটাল হলে সকল সহকারী শিক্ষকসহ পুরো প্রতিষ্ঠানের আমুল পরিবর্তন ও দ্রুত আইটিভিত্তিক শিক্ষা কার্যকর হবে৷
লেখক- মোহাম্মদ মহসিন মিয়া
সহকারী প্রধান শিক্ষক৷