নৌকাডুবিতে একই পরিবারের চারজনসহ মোট ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

প্রকাশিত: ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২

নৌকাডুবিতে একই পরিবারের চারজনসহ মোট ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

পঞ্চগড়ের বোদায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় আরও পাঁচ মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। নদীতে ভেসে উঠছে একের পর এক লাশ। এ নিয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত একই পরিবারের চারজনসহ মোট ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট সোমবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে নদীতে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে নতুন করে কোনও মরদেহ উদ্ধার হয়নি। নদীর ওই অংশে পানির তীব্র স্রোত লক্ষ করা গেছে।
করতোয়া নদীতে নৌকাডুবর ঘটনায় এখনও ৬৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধার কাজ স্থগিত ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস।

নিহতরা হলেন- দীপংকর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), শ্রেয়সী (৩), তনুশ্রী (৫), প্রিয়ন্তী (৫), উশশী (৩), শ্যামলী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), শোভা রানী (২৭), খুকি রানি (৩৫), প্রমিলা রানি (৫৫), তারা রানি (২০), শোনেকা রানী (৬০), ফাল্গুনি রানি (৫৫), প্রমিলা (৭০), ধনোবালা (৪৭), সুমিত্রা রানী (৫৭), সফলতা রানী (৪০), শ্যামলী বালা (৩৬), অমল চন্দ্র (৩৫), বিলাস চন্দ্র (৫০), হাসান আলী (৭০) মাঝি-ইজারাদার। এ ছাড়া বাকি মরদেহগুলো তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মহালয়া উপলক্ষে পাঁচপীর, বোদা, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এসব এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। এ সময় নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। এ কারণে মাঝ নদীতে পৌঁছানোর পর যাত্রীর চাপে নৌকা ডুবে যায়। এ সময় কিছু মানুষ সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বেশির ভাগ যাত্রীই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, নৌকাডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিডুবা ছত্রশিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিন চন্দ্র। পেশায় তিনি একজন ভাটাশ্রমিক। মহালয়া দেখতে তার পরিবার থেকে পাঁচ সদস্য গিয়েছিলেন। তার মধ্যে চারজন নৌকা ডুবে মারা গেছেন। এ সময় একজন বেঁচে ফিরেছেন। নৌকাডুবিতে রবিনের স্ত্রীর সঙ্গে মারা যায় ছেলে বিষ্ণু রায় (৩), ছোট ভাই কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫) ও বড় ভাই বাবুল রায়ের ছেলে দীপঙ্করও (৩)।

রবিন চন্দ্র বলেন, ‘বাচ্চাটা খুব বায়না ধরেছিল নতুন কাপড় নেবে। আমি বলেছিলাম, মহালয়া শেষ হলে তারপর কিনে দেবো। আমার বাচ্চার আর নতুন কাপড় পরা হলো না। আমার আজ সব শেষ হয়ে গেল। কি নিয়ে বেঁচে থাকব আমি’?

প্রাণে বেঁচে আসা দিপু বলে, রোববার বিকেলে মহালয়া দেখার জন্য চাচ্ছিলাম। নদীর মাঝখানে যাওয়ার পর হঠাৎ করে নৌকা দুলতে থাকে। তারপর আমি নিচে পড়ে যায়। তারপর সাঁতার কাটালাম।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার নিজ হাতে তিনটা মরদেহ উদ্ধার করেছি। আরও কয়েকজনকে বাঁচিয়েছি। প্রায় ১০০ জনের বেশি লোক আমরা নৌকায় ছিলাম।

দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমার ইউনিয়নের আটজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে চারজন রবিনের স্বজন।


Categories