
অহিদুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টারঃ নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনে উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে প্রায় ২৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার দুপূর পর্যন্ত এই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
তারা হচ্ছেন, প্রয়াত এমপি ইসরাফিল আলমের সহধর্মীনি সুলতানা পারভিন বিউটি, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট পীযূষ কুমার সরকার, ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সদস্য শেখ মো: রফিকুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদাদ খাঁন পিটু, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নহিদ ইসলাম বিপস্নব, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আক্কাস আলী প্রামানিক, স্যার সলিমুলস্না মুসলিম হল ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক, নওগাঁ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারম্নক সুমন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান নূরম্নল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন উপ-কমিটির সদস্য ড. জাহেদুল হক জাহিদ, মেজর এসএম আব্দুল জলিল (অব:), আত্রাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান, জেলা ছাত্র লীগ সাবেক নেতা ও যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়। বাঁকি আরো নাম জানা সম্ভব হয়নি।
এ ছাড়াও নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাছিম আহমেদসহ অনেকের নাম উপ-নির্বাচনের শোনা যাচ্ছে। আগামী ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে এবং জমা দেওয়া যাবে। শুক্রবার দুপূর ২৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। রবিবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ পর্যন্ত আরো ১০ জনের মতো প্রত্যাশী মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন বলে দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, নওগাঁ-৬ রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত আসন। এ আসনে উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫১, নওগাঁ-৬ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন ডজনের বেশি নাম শোনা যাচ্ছে। আর অপরদিকে কেন্দ্রী নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে সাড়া পাবার অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপি। এছাড়া জাতীয় পার্টিরও মনোনয়ন প্রত্যাশীরও নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক তা নিয়ে দ্বিদ্ধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। গত ২৭ জুলাই এ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ায় আসনটি শুন্য হয়।
ইতি মধ্যেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এলাকার মানুষের মাঝে আলোচনার বিষয় নির্বাচন ও প্রার্থীর। এ আসনটিতে বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে কেন্দ্র থেকে এখনো সাড়া পাননি বিএনপি এমন তথ্য বিএনপি নেতাকর্মীর সূত্রে জানা গেছে। দুটি উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসনে মোট ভোটার প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮শ’ ৮৬ জন।
বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত এ আসন ২০০৮ সালে ভোট যুদ্ধে দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকার আমলের উন্নয়ন দাবি করে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।
এ আসনে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর করিব সাংসদ থাকাকালীন বাংলা ভাইয়ের হত্যা, নির্যাতন, গুমসহ সন্ত্রাস্ত্রী কর্মকান্ড ও ‘রক্তাত্ত’ জনপদ বলে পরিচিত এই রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে ও বিভিন্ন কর্মীসভার আয়োজনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সাথে কুশল মত বিনিময় করেছেন। নির্বাচনী মাঠ দখল এবং মনোনয়ন নিশ্চিত করতে এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন।
জানা গেছে, ১৯৯১ ও ৯৬ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান। ২০০১ সালে পুনরায় আলমগীর কবীর বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রয়াত ইসরাফিল আলম এমপি। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। একই বছরে আবার এলডিপি থেকেও পদত্যাগ করেন।
২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের ছোট ভাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর থেকে এই নির্বাচনী এলাকায় শান্ত্মির সুবাতাস বইতে শুরম্ন করে। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে আবারো বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। দীর্ঘদিন বিএনপির অধীনে নওগাঁ-৬ আসন থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে।
বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর শাসন আমলে এই দুই উপজেলা সর্বহারা ও জঙ্গী এলাকা হিসেবে সারাদেশে পরিচিত হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থি ইসরাফিল আলম ক্ষমতায় আসার পর এলাকার আইনশৃঙ্খলা অনেকটায় নিয়ন্ত্রনে ছিল। তবে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনের সময় কোন ধরনের প্রাণহানী চান না এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতনরা।
উপ-নির্বাচনকে ঘিরে নওগাঁ-৬ আসনের আওয়ামী লীগ থেকে তিন ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও প্রায় ৩০জন মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে কেন্দ্র থেকে সাড়া না পাওয়ায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম পাওয়া যায়নি। এছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রাণীনগর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী গোলাম কবির ও আত্রাই উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন এর নাম শোনা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত্ম জাতীয় পার্টিও নির্বাচনের অংশগ্রহণ করবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে।
আসন্ন উপ-নির্বাচন নিয়ে এলাকার সাধারণ তরম্নণ ও নতুন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার শান্তি বজায় রাখা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবা পেতে তারা বিশ্বাসী। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও সকল বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবেন এলাকার উন্নয়ন করবেন ও যাকে তাড়া যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করবেন তাদেরকেই তারা ভোট দিবেন।
উলেস্নখ্য, লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ২৭ জুলাই ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের এমপি ইসরাফিল আলম। তিন বারের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। ১৯৬৬ সালে রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ইসরাফিল আলম নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্রম মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।