
পিতা-মাতার জন্য কেঁদে কেঁদে আকুল হয়ে পড়ছে দুই শিশু। কোন কোন সময় একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। রক্ত বলে কথা। দুই সহোদরের এমন কান্না দেখে দায়িত্বরত পুলিশও কাঁদছে। দুই ভাই কেন বা কিভাবে হারিয়ে গেলো তা রীতিমত রহস্যের জন্ম দিয়েছে। নাকি পাচারকালে কৌশলে তারা পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে, তাও স্পষ্ট নয়। নাকি অভাবের তাড়নায় পিতা-মাতা ভরণ-পোষণ দিতে না পেরে রাস্তায় ফেলে গেছে, তাও অস্পষ্ট। আবার করোনা আক্রান্ত পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের রক্ষা করতে রাস্তায় ফেলে গেছেন কিনা তা নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ হারিয়ে যাওয়া দুই শিশুর রহস্যের সন্ধান করছে। খোঁজা হচ্ছে পিতা-মাতাকে। ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকা শিশুসহ অন্যদের অত্যন্ত মানবিকতা ও আন্তরিকার সঙ্গে যথাযথ যতœ নিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনাটির সূত্রপাত গত ১ জুন। ওইদিন বিকেল চারটার দিকে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ বেড়িবাঁধ এলাকায় টহল ডিউটি দিচ্ছিল। এ সময় বেড়িবাঁধের ময়দার মিল এলাকায় দেখা যায়, দুই শিশু অঝোরে কাঁদছে। পুলিশ কাছে গেলে প্রথমে তারা ভয় পেয়ে যায়। তারা আরও জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। পরে পুলিশ কাছে গিয়ে সান্ত¡না দিলে তাদের কান্না কিছুটা কমে। এর পর পুলিশ তাদের নাম জানতে চায়।
তারা জানায়, তাদের একজনের নাম কাউছার। অপরজনের নাম জিয়াদ। তারা সম্পর্কে সহোদর ভাই। তাদের পিতার নাম রাশেদ। আর মায়ের নাম তানজিলা। তাদের বাড়ি কোথায় এবং ঢাকায় কোথায় থাকত তা কিছুই বলতে পারে না। তারা সেখানে কিভাবে এসেছে তাও বলতে পারে না। তারা শুধুই কাঁদতে থাকে। তাদের পরণের বেশভূষা দেখে ধারণা করা হয়, তারা নি¤œ আয়ের পরিবারের সন্তান হতে পারে। তারা কিভাবে হারিয়ে গেছে তাও বলতে পারছে না। পরে পুলিশ মানবিক কারণে তাদের প্রথমে খাওয়াদাওয়া করায়। এরপর তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় তেজগাঁও থানা কম্পাউন্ডে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। সেখানে তাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় আনা হয়েছে। তাদের সর্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। ভাল ভাল খাবার দেয়া হচ্ছে। তবে কিছুতেই যেন তারা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলা করছে। খানিক পরেই আবার অঝোরে বাপ, মা ডেকে কান্নাকাটি করছে। তাদের কান্না এতটাই হৃদয়বিদারক যে, পুলিশ সদস্যদের চোখেও পানি এসে যাচ্ছে। দুই শিশুর কান্না দেখে তারা কাঁদছেন। ঘটনাটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে খুব আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চটপটে স্বভাবের দুই সহোদর সবই বলতে পারছে, অথচ তারা কিভাবে হারিয়ে গেলো, তাদের পিতা-মাতা কোথায়, কোথায় তাদের বাড়িঘর, কিছুই বলতে পারছে না। এমন ঘটনায় বেশ রহস্যের জন্ম হয়েছে। পাঁচ বছর বয়সী কাউছারের গায়ের রং কালো, উচ্চতা ৩ ফুট ৫ ইঞ্চি। জিয়াদের বয়স তিন বছর। তার গায়ের রং কালো, উচ্চতা ৩ ফুট। এ ব্যাপারে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।
এই কর্মকর্তা বলছেন, অভাবী পিতা-মাতা সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে না পেরে রাস্তায় ফেলে গেছেন কিনা, আবার পাচারকালে তারা কৌশলে পালাতে সক্ষম হয়েছে কিনা, নাকি পাচারকারীরাই তাদের ফেলে গেছে, আবার করোনা আক্রান্ত হয়ে পিতা-মাতা তাদের জীবন রক্ষার্থে রাস্তায় ফেলে গেছেন কিনা, তাও স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে দুই শিশুর পিতা-মাতার সন্ধান চলছে। তাদের পাওয়া গেলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
শিশুদের পিতা, মাতা বা স্বজনদের তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের ০১৭৪৫-৭৭৪৪৮৭ মোবাইল নম্বরে ও ০২৯১১০৮৫ টিএনটি নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে।