টেকসই উন্নয়ন ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে  শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ১২:১৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২০

 

 

শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। কারণ টেকসই উন্নয়নে জাতীয়করণের বিকল্প নাই। তাই প্রতিটি শিক্ষক সংগঠননের নেতৃবৃন্দই শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে শিক্ষা জাতীয়করণের জন্য সরকার মহলে আলোচনা দরকার। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। জাতির মেরুদন্ড ঠিক রাখার দায়িত্ব সাধারণত রাষ্ট্রের উপরই বর্তায়। অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা শিক্ষা জাতীয়করণে যতটা হাহুতাশ করছে, সরকার ততটা আন্তরিক বলে মনে হচ্ছে না। সরকারের উচ্চমহলে কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয়করণ নিয়ে তেমন আন্তরিক বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। প্রয়োজনটা যে রাষ্ট্রেরে এতেও কোন সন্দেহ নেই।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০১৯ এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘তরুণ শিক্ষকরাই পেশার ভবিষ্যৎ’। বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা বিবেচনার দাবি রাখে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় খুব একটা আসে না বললেই চলে। যদিও বা কেউ আসে, কিছুদিন যেতে না যেতেই এ পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশার দিকে ধাবিত হয়। এর মূল কারণ শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা অত্যন্ত সীমিত। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী পাহাড়সম বৈষম্যের শিকার। তাই মেধাবী ও তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য নিরসন এবং শিক্ষা জাতীয়করণ অত্যাবশ্যক।

এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন শিক্ষা জাতীয়করণ। কিন্ত এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সরকার ইতমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ জাতীয়করণ করেছেন। বিচ্ছিন্নভাবে জাতীয়করণ করে তেমন কোন সুফল পাওয়া যাবে না। এতে শিক্ষকদের মধ্যে আরও ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে। একটু গভীরে চিন্তা করলে দেখা যায় শিক্ষা জাতীয়করণে লাভ বহুমাত্রিক। বিশেষ কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে জাতীয়করণে বেশ সুফল পাওয়া যাবে। সেখানেই শেষ!একই সিলেবাস ও একই কারিকুলাম পড়িয়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা পাবে ১০০% উৎসব ভাতা আর এমপিওভুক্ত  শিক্ষকরা ২৫%, তারা পাবে বেতন আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অনুদান।

বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য বিরাজমান। পাঁচ লক্ষাধিক বেসরকারি এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা আজ খাদের কিনারে? তাদের হৃদয়ে আজ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীরা ২০১৫ সাল থেকে ৫% ইনক্রিমেন্ট পেলেও বেসরকারি শিক্ষকরা পেয়েছে ২০১৮ সাল থেকে। তাও আবার কোনরকম বকেয়া ছাড়া। মরার উপর খাড়ার ঘা! এ আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই অতিরিক্ত ৪% কেটে নেয়া হচ্ছে?  বেসরকারি শিক্ষকরা মাত্র ২৫% উৎসব ভাতা পাচ্ছে। তাদের বাড়ি ভাড়া মাত্র ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, বিনোদন ভাতা, সন্তানের শিক্ষা ভাতা একেবারেই নেই। তাদের চাকরিতে কোন বদলী নেই।

 

সবই কাকতালীয় কারবার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল, শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা। এদেশের গরীব ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানো। তাদের অধিকার আদায়ের জন্যই তিনি লড়াই করেছেন, জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় জেলে অন্তরীণ থেকেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন একটি বৈষম্যহীন ও সুখী সম্মৃদ্ধশালী সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার। জাতীয়করণ হলে বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।এমপিওভূক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা এখন নানা দাবিতে আন্দোলনরত। তারা জাতীয়করণ ফোবিয়ায় আক্রান্ত। অপ্রিয় হলেও সত্য যে তারা শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ দেয়ার চেয়ে আন্দোলন এবং বিকল্প পন্থায় অর্থ উপার্জনের দিকেই বেশি মনোযোগী। তাই শিক্ষা জাতীয়করণ হলে এহেন অচলাবস্থার নিরসন হবে।

দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে সরকারি স্কুল-কলেজের সংখ্যা অতি নগণ্য। এসব প্রতিষ্ঠানে সুযোগ সুবিধা বেশি থাকলেও সাধারণ জনগণের ছেলেমেয়েরা ভর্তির সুযোগ পায় না বললেই চলে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা উচ্চহারে বেতন দিয়ে বেসরকারি স্কুল কলেজে লেখাপড়া করছে। শিক্ষা জাতীয়করণ হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। কিন্তু শিক্ষা বেসরকারি রেখে এ লক্ষমাত্রা অর্জন কতটুকু সম্ভব তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় লক্ষমাত্রা অর্জনে শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই।

উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলো বিবেচনায় সার্বিকভাবে বলা যায় রাষ্ট্রেরে প্রয়োজনেই অনতিবিলম্বে শিক্ষা জাতীয়করণ করা উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে ছাড়া এদেশে কোন কিছুই হয় না। সবকিছু আপনাকেই করতে হয়। তাই বেসরকারি শিক্ষকদের ভাগ্যোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক মুক্তিও আপনাকে ছাড়া হবে না। তাই ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশত বার্ষিকী মুজিববর্ষে এমপিওভূক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে তাদের চোখের পানি মুছে দিন। প্রত্যাশা করছি আপনার ঐতিহাসিক আরও একটি সিদ্বান্ত জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অনেক দূর। আপনি পেরেছেন, পারেন এবং পারবেন। আপনার কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

মো : তোফায়েল সরকার

যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক

বাংলাদেশ বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম,কেন্দ্রীয় কমিটি।


Categories