
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতা রোধে জোনভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নে অনলাইন বৈঠক করেছেন সরকারের পাঁচ মন্ত্রী, তিন মেয়র। করোনায় সর্বাধিক মৃত্যু ও শনাক্তের দিনে গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন এই বৈঠকে মন্ত্রী-মেয়রদের পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবসহ সরকারের উর্র্ধতন কর্মকর্তারা এতে যুক্ত ছিলেন। বৈঠকে দেশের বর্তমান করোনা মহামারীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
শুক্রবার অনলাইন এই বৈঠকে অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এম তাজুল ইসলাম জোনভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত কমিটিকে সক্রিয় করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য কিছু সংখ্যক হাসপাতাল রাখা যেতে পারে বলেও মতামত দেন তিনি। রাজধানীসহ সারাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে গঠিত কমিটি এবং উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে কনফারেন্সে আরও অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরহাদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসসহ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
করোনা সংক্রমণ রোধে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খুলে দিয়ে অর্থনীতি সচল রাখতে এখন জোন বা এলাকাভিত্তিক লকডাউনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার জোনভিত্তিক লকডাউন করা হয়েছে। গত ৮ মার্চ থেকে তিন মাসের বেশি সময়ে দেশের সর্বাধিক মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত হয়েছে শুক্রবার। এদিন ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব কারণে লকডাউন বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে অনলাইনে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে যোগ দিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, কোন ওয়ার্ডে যে অংশে কোভিড সংক্রমণ রেড জোনের মাত্রায় পৌঁছেছে, সেখানে পুরো ওয়ার্ডের পরিবর্তে শুধু সেই এলাকায় লকডাউন করলে কাজের চাপ কম হবে। সারাদেশে যখন এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হবে তখন সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ন্যস্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ করোনা ছাড়াও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাজনিত বিষয় সামলাতে গিয়ে শুধু করোনা প্রতিরোধে এত সংখ্যক জনবল পদায়ন করা কঠিন হবে। সেজন্য জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ এটা কার্যকরী করতে সহজ হবে।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ত্রাণবিতরণসহ বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিগুলোকে সক্রিয় করে লকডাউনের বিধি-বিধান বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিলে তা অধিক কার্যকরী হবে। জোনভিত্তিক এলাকাগুলোতে অন্যান্য জরুরী সেবা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুবিধার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, এসব এলাকায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য এ্যাম্বুলেন্স সেল করে তাৎক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।