জনগণের কল্যাণই গুরুত্ব দিয়েছি :প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সংসদে বক্তৃতা

প্রকাশিত: ২:১৫ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তৃতা করেন

করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে মুজিববর্ষের কর্মসূচির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সীমিত করার কথা তুলে ধরে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কল্যাণের দিকেই তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দুঃখকষ্ট মানুষের মধ্যে আছে। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। এর থেকে মানুষকে রক্ষা করা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, মানুষ যাতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখেই মুজিববর্ষ উৎযাপনের সব কর্মসূচি স্থগিত করেছি। আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশেষভাবে উদযাপনের কথা ছিল, সেটাও করতে পারলাম না।’

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে একথা বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করি। এটা নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্য তা পালন করতে পারিনি। আজকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সীমিত আকারে উদযাপন করছি। জনসমাগম হবে- এ ধরনের সব কর্মসূচি বাতিল করেছি জনগণের কল্যাণে। কারণ আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটাই আমরা গুরুত্ব দিই।’

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। প্রায় দুই যুগ পর যে দলটির নেতৃত্বে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

অন্য বছর আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে আওয়ামী লীগ। এবার মুজিববর্ষে দলের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে তাদের আরও ব্যাপক পরিকল্পনা ছিল; কিন্তু মহামারির মধ্যে সব পরিকল্পনাই সীমিত করতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দুঃখকষ্ট মানুষের মধ্যে আছে। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-কৃষক লীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছানো, লাশ দাফন থেকে শুরু করে সব কাজে মানুষের পাশে আছেন। নিরলসভাবে তারা এলাকাভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এখন বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। এভাবেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনকের নাম একসময় ‘ইতিহাস থেকে ?মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল’ কিন্তু তা হয়নি।

অবশ্য সত্যকে মোছাও যায় না। জাতির পিতা শারীরিকভাবে আমাদের কাছে নেই। তার অস্তিত্ব বাঙালির হৃদয়ে আছে। তার যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা আমাদের পূরণ করতে হবে। আজকের দিনে আমাদের এটাই শিক্ষা, বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কথাই বলেছে। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। আর এ সংগ্রামের পথে অগণিত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষায় আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজকে আমরা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি।

‘কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির পিতা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যখন পেলেন, দেশ গড়ে তুলে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় আরেক মীর জাফর খন্দকার মোশতাক এবং জিয়ার কুচক্রির ফলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়ে গেল।’

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর আইয়ুব খানের সব রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দিয়ে বঙ্গবন্ধু জনগণের ক্ষমতায়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন; কিন্তু তা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করাই এখন আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার বক্তৃতায় বলেন, ‘১৭৫৭ সালে সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়, … জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেই সূর্য উদিত হয় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি। জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করেছেন এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, জনগণের জন্য। তিনি তার সংগ্রামের পথে অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করেছেন।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে বাঙালি কিছু পেয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। এছাড়া অন্য সময় পেছনে টেনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।’

এদিন বেলা ১১টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপন হয়।


Categories