ছাতকে ছাদিক নামের এক ব্যক্তির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ১২ টি পরিবার।

মোঃআজিজুর রহমান,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।।
ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে লোক পাঠানোর নামে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।প্রতারক মো.ছাদিক আহমদ সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের মৃত. সোহার আলী ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,নিজ বাড়ীতে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এমন অজুহাত দেখিয়ে প্রায় চার মাস পূর্বে ছাতকের চরমহল্লা ইউনিয়নের টেটিয়ার পয়েন্ট সংলগ্ন ফারুক মিয়া’র পরিত্যাক্ত বাসা ভাড়া নেয় ছাদিক আহমদ।সে,তার স্ত্রী ও চার সন্তানসহ বসবাস করত ভাড়াটিয়া বাসায়। সে স্বল্প সময়ে অত্যন্ত ভালো ব্যবহারে অত্রএলাকার মানুষের কাছে আস্থাভাজন ও প্রিয় হয়ে ওঠে,সবার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সিলেটের আম্বরখানাস্থ একটি ট্রাভেলস্ ব্যবসায়ী পরিচয়ে প্রতারনার ফাঁদ তৈরি করে প্রতারক মো. ছাদিক আহমদ।এই প্রতারক বিদেশে ভাল চাকরির ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অত্র এলাকার প্রায় ১২ টি পরিবারকে নি:স্ব করেছে।ভুক্তভোগীরা সর্বস্ব হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন কঠিন সময় পার করছেন।
ছাতক উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের চরবাড়ুকা গ্রামের মোঃ ফয়ছল আহমদ মাছুমকে সৌদি আরব পাঠানোর নামে ৩ লাখ টাকায় চুক্তির মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বায়না করে একটি অঙ্গীকারনামা সম্পন্ন হয়।টেটিয়ারচর গ্রামের শিউলি বেগমের ভাইকে সৌদি আরব পাঠানের নামে ৩ লাখ টাকায় চুক্তির মধ্যে ১ লাখ টাকা বায়না করা হয়।চরমাধব গ্রামের রমজান আলীর সঙ্গে ৪ লাখ টাকা চুক্তি হলে ২ লাখ টাকা বায়না করা হয়।চরমাধব গ্রামের এখলাছ মিয়ার সঙ্গে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় চুক্তি হলে ৮০ হাজার টাকা বায়না করা হয়।সিলেটের আখালিয়া এলাকার নেহারি পাড়ার কামাল উদ্দিনকে সৌদি আরবে ফ্যামিলি ভিসা (১০ জন) ১ কোটি টাকায় চুক্তি হলে ১৭ লাখ টাকা বায়না করা হয়। অবশেষে সরকারি ঘর দেওয়ার নামে স্হানীয় জনপ্রতিনিধির নাম ভাঙ্গিয়ে রমজান আলীর কাছ থেকে আরো ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক মো. ছাদিক আহমদ।
গত ৫ জুলাই টাকা ফেরত দিবে বলে ভুক্তভোগীদের আশ্বস্থ করে গত ১ জুলাই বিয়ের কথা বলে কৌশলে তার ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে টেটিয়ারচর সংলগ্ন বাসা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়।৩ জুলাই রাতে আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে ফেলে।এবং ৪ জুলাই ঘরে থাকা এলইডি টিভি মেরামত করার কথা বলে তার নিজ মোটর সাইকেল যোগে সে নিজেও পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রতারক মো. ছাদিক আহমদ দোহালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনু মিয়ার উদ্যোগে একাধিকবার সালিসি বৈঠকের চেষ্টা করা হলে সে আসেনি।তিনি প্রতারক মো. ছাদিক আহমদকে ধরে নিয়ে তাহার নিকট হস্তান্তর করার কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে ভোক্তভোগী শিউলি বেগম বলেন, আমার ভাসুরের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করত,এখান থেকে তার সাথে পরিচয়। আমার স্বামী বিদেশ থেকে কত কষ্টে উপার্জন করে টাকা দিয়েছিলেন,আমার ভাইকে বিদেশ পাঠানোর জন্য।।ভিসা দিতে না পারায় সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল।কিন্তু আমি আমার পিত্রালয়ে থাকার সুযোগে সে পালিয়ে গেছে।
কামাল উদ্দিন বলেন,সিলেটের আম্বরখানাস্থ আল-সৌরভ ট্রাভেলস্ এ একদিন মো. ছাদিক আহমদ সঙ্গে দেখা হয়।এখান থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়।একাধিক বার তার এলাকায় গিয়ে যোগাযোগ করেছি।কোন সুরাহা না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি।
চড়মাধব গ্রামের রমজান উদ্দিন বলেন,বিদেশে ভাল চাকরি ও সরকারী ঘরের প্রলোভন দেখিয়ে আমার টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাকে নি:স্ব করে দিয়েছে।
চড়মাধব গ্রামের এখলাছ মিয়া ও চড়বাড়ুকা গ্রামের ফয়ছল আহমদ বলেন,নি:স্ব হয়ে গেছি। মো.ছাদিক আহমদের গ্রাম এলাকায় রয়েছে একদল ক্যাডার বাহীনি।টাকা চাইতে গেলে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো.ছাদিক আহমদ মুঠোফোনে জানান,সে টেটিয়ার চর ভাড়াটিয়া বাসায় ছিলেন স্বীকার করলেও লেনদেনের বিষটি তিনি অস্বীকার করেন।
চরমহল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসনাত বলেন,এ বিষয়ে তার জানা নেই।দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার মিয়া আনু বলেন,ছাদিক একটা বড় প্রতারক।সে শুধু ছাতক-দোয়ারাবাজারে নয়,জেলার দিরাই-শাল্লাসহ বিভিন্ন উপজেলাতে প্রতারণা করে আাসছে। তিনি আরো বলেন,এখন সে বাড়ীতে নেই।তাকে ধরে নিয়ে যেতে বলেছিলাম।