
স্টাফ রিপোর্টারঃ কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে অটোচালক হযরত আলী (২৮) হত্যার বিচার ও আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহ রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় অটোচালক হযরত আলী হত্যার বিচার ও আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে আজ রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন রাস্তায় এক মানববন্ধন করে নিহতের স্বজনরা। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন রাস্তায় নিহতের স্বজন, স্থানীয় অটো রিক্সাচালক ও এলাকাবাসী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। এছাড়া গত ৪ ও ৬ সেপ্টেম্বর একই স্থানে মানববন্ধন করে নিহতের স্বজনরা।
এসব মানববন্ধনে নিহত হযরত আলীর পিতা আক্কেল আলী, নিহতের খালা আতর বানু, বগ্নিপতি বাবুল মিয়া, বড় বোন লিপা আক্তার, স্ত্রী সাহিদা, চাচা জালাল মিয়া ও অটোচালক উছমান মিয়া তাদের বক্তব্যে নিহত হযরত আলী হত্যার আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানান। হযরত আলী খুনের ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে নাপারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা আরো বলেন পুত্র শোকে মা নূরজাহান আধা পাগল হয়ে ঘরবন্দী রয়েছে। নিহতের ছেলে ৮ মাস বয়সের ইসমাঈল ও ৪ বছর বয়সের তাজিম বার বার বাবা বাবা বলে ডাকছে ও কান্না কাটি করে যাচ্ছে। অবুঝ দুই শিশু বাচ্চাকে এতিম করে আসামীরা খোলা আকাশের নীচে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে তা হতে দেওয়া যাবেনা। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র সু-দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
তারা আরো বলেন, আমরা অশিক্ষিত মানুষ। মামলা মোকাদ্দমা সম্পর্কে আমরা কিছুই বুঝিনা। মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সাংবাদিক মুহাম্মদ কাইয়ূম হাসান, মোহাম্মদ আরীফুল ইসলাম, মো. নাঈমুজ্জামান নাঈম ও ফারজানা আক্তার আমাদের ভুল বুঝিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার দিকে একটি মানববন্ধনে আমাদের দিয়ে মিথ্যা বক্তব্য উপস্থাপন করিয়ে কুলিয়ারচরের সিনিয়র সাংবাদিক মুহাম্মদ কাইসার হামিদের মানসম্মান খুন্ন করিয়েছে। এ জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। পাশাপাশি সাংবাদিক মুহাম্মদ কাইয়ূম হাসান, মোহাম্মদ আরীফুল ইসলাম, মো. নাঈমুজ্জামান নাঈম ও ফারজানা আক্তারের এহেন কার্যকলাপের ধিক্কার জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, পাওনা ৩০ টাকার জন্য কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌর এলাকার পূর্বগাইলকাটা মহল্লার আক্কেল আলীর এক মাত্র পুত্র অটোচালক মো. হযরত আলী (২৮) নামে এক অটোচালক সহপাঠীদের হাতে খুন হয়। গত ২৯ আগষ্ট শনিবার সকালে থানা পুলিশ ওই নিহত অটোচালকের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে । এ ঘটনায় নিহতের পিতা মো. আক্কেল আলী বাদী হয়ে গত ৩০ আগষ্ট রোববার হযরত আলীর সহপাঠী কুলিয়ারচর পৌর এলাকার পূর্বগাইলকাটা মহল্লার জালাল উদ্দিনের ছেলে মো. রানা মিয়া (১৯), আলী আকবরের ছেলে মাসুম মিয়া (৩০), মো. জজ মিয়ার ছেলে রিয়াদ (২২), রতন মিয়ার ছেলে মো. শরীফ মিয়া (২৭), বড়খারচর গ্রামের গোলাপ মিয়ার ছেলে মোখলেছ মিয়া (৩০) ও মৃত শহিদ মিয়ার ছেলে আকরাম হোসেন (২৩) কে আসামী করে কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ২৭।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টার দিকে অটো চালক হযরত আলী ৭৫ হজার টাকা নিয়ে নতুন অটো ক্রয় করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির পার্শবর্তী আক্কাছ আলীর গাছ-পালার বাগানে যাওয়ার সাথে সাথে পূর্ব থেকে অবস্থান করে থাকা তার সহপাঠী পূর্বগাইলকাটা মহল্লার মো. রানা মিয়া (১৯), রিয়াদ মিয়া (২২) মাসুম মিয়া (৩০) ও মো. শরীফ মিয়া (২৭), পার্শ্ববর্তী বড়খারচর গ্রামের আকরাম হোসেন (২৩) ও মোখলেছ মিয়া (৩০) মিলে হযরত আলীর নিকট মাসুমের পাওনা ৩০ টাকা দাবী করে। এ সময় হযরত আলী মাসুমের দাবীকৃত পাওনা ৩০ টাকা পরে দিবে জানালে এদের মধ্যে কথা কাটা-কাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে মাসুমসহ সবাই মিলে হযরত আলীকে বেদম মারধর করে তার নিকট থাকা নতুন অটো ক্রয় করার ৭৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় হযরত আলী মাঠিতে লুটে পরলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হযরত আলীর অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। নিরুপায় হয়ে নিহতের পরিবার ওই দিনই রাতে তাকে ঢাকা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে উত্তরা পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে সাময়িক চিকিৎসার করার পর তাকে অন্যান্য কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেয়। এই অবস্থায় গত ২৮ আগষ্ট শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে এ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কেএম মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ কারা হলে তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে আসামীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।