
এমপিও নীতিমালা সংশোধন : এ কেমন বিচার? – বি এম ইউসুফ আলী।
আজ ২ সেপ্টেম্বর ‘দৈনিক আজকালের খবর’ পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে । খবরটি তৈরি করেছেন সাংবাদিক নূরুজ্জামান মামুন। প্রকাশিত সেই খবর থেকে জানা গেছে ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুল ও কলেজ জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ ‘ এর সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আরো জানা গেছে, বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, প্রভাষক পদে এমপিওভুক্তির আট বছর পূর্তিতে ৫:২ অনুপাতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান । এই শর্তের কারণে অনেক প্রবীন শিক্ষক চাকরি থেকে অবসরে গেলেও সহকারী অধ্যাপক হতে পারেন না। অনেক প্রবীন প্রভাষকের ছাত্রও নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক পদে চাকরি নিয়ে সহকারী অধ্যাপক হয়ে যাচ্ছেন। বহু বছর ধরে এই অনুপাত প্রথা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপকের বহু বছরের অনুপাত প্রথা শিথিল করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালা জারির পর চাকরির ১০ বছর পূর্তি হলেই কর্মরত প্রভাষকদের অর্ধেক সহকারী অধ্যাপক হতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে চাকরিতে জ্যেষ্ঠতার জন্য ১৫ নম্বর, প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত হাজিরার জন্য ১০ নম্বর, এসিআরের উপর ১০ নম্বর, উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ১০ নম্বর, গবেষণাসহ বিভিন্ন যোগ্যতার ওপর মোট ১০০ নম্বর যোগ্যতার সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করতে একটি সাব কমিটি করে দিবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি যোগ্যতার সূচক নির্ধারণ করে দিবে। এর মধ্য দিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসিআর চালু হতে যাচ্ছে।
এর পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ পদ শুন্য হলে একই কলেজের কোন শিক্ষক অধ্যক্ষ হতে পারবেন না। ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপকরা অধ্যক্ষ হতে পারবেন। ইন্টারমিডিয়েট কলেজে নতুন করে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব কলেজে সিনিয়র প্রভাষক পদ সৃষ্টি করা হবে।
চারুকারু ও কৃষিশিক্ষা ছাড়া অন্য বিষয়ে বিএড ডিগ্রি ছাড়া কেউ বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক হতে হতে পারবেন না। শিক্ষা জীবনে তৃতীয় বিভাগধারী কেউ প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ হতে পারবে না। নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারের নতুন পদটি জনবল কাঠামোতে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর অন্যান্য শিক্ষকের মত আমিও ক্ষুব্ধ। যোগ্যতা,পদবি ও স্কেল একই হওয়ার পরেও উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য থাকা অত্যন্ত অপমান ও দুঃখজনক।
আবার এই সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী একজন মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়ে কলেজে চাকরি করতে পারবে কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পারবে না বি.এড ছাড়া! এটা কি ধরনের নীতিমালা? এখন উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের প্রভাষকদের আর সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না হলে পূর্বে পদোন্নতি প্রাপ্যদের সাথে বৈষম্যতো থেকেই যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়, ডিগ্রি কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা যদি একই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হতে পারেন তাহলে কেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম হবে? আসলে এই নতুন নীতিমালা বৈষম্য নিরসনের নয়; বরং বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে। অনেকের মনে করছেন প্রস্তাবিত নীতিমালায় প্রভাষকদের জন্য সুবিধা তো নেইই, বরং আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তারা বৈষম্যের শিকার হবেন এবং কর্মদক্ষতা হারিয়ে হতাশায় ডুবে যাবেন। সেইসাথে এই পেশায় মেধাবীরা কেউ আর আসতে চাইবেন না।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনিতেই গভর্নিংবডি ও অধ্যক্ষের আচার-আচরণে শিক্ষক সমাজ ক্ষুব্ধ সেখানে অধ্যক্ষের উপর এসিআর তৈরির দায়িত্ব দিলে তিনি আরো একচ্ছত্র আধিপত্যবাদী ও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবেন।
সুতরাং,
১. ১০ বছর নয়, আগের নিয়মে ৮ বছর হলে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে হবে।
২. এমপিও ভূক্ত নয়, যোগদানের তারিখ থেকে অভিজ্ঞতা গণনা করতে হবে।
৩. অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রভাষকরাও প্রিন্সিপ্যাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল হওয়ার বিধান রাখতে হবে।
৪. ১২ বছর অভিজ্ঞতায় সহযোগী অধ্যপক এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যপকে পাদায়ন দিতে হবে।
৫. বি এড ছাড়া মাধ্যমিকের কেউ শিক্ষক হতে পারবেন না এটা প্রত্যাহার করতে হবে।
বেসরকারি শিক্ষকদের জনবল কাঠামো সংশোধনীর খসড়া যা চুড়ান্ত হতে যাচ্ছে সেই নীতিমালা আরো জটিল করা হচ্ছে। নীতিমালা সংশোধন নামে এসব প্রহসন বন্ধ করুন।
বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে হলে এমুহূর্তে শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব নীতিমালা করা বড্ড বেশি প্রয়োজন।
লেখক পরিচিতি : কলামিস্ট ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ; bmyusuf01@gmail.com