
যে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি একটি স্বাভাবিক এবং অবশ্য পালনীয় প্রক্রিয়া। একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মনোবল চাঙ্গা করার জন্য, নতুনভাবে কাজে উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্য তাকে বদলি করা হয়। বদলির পেছনে বিভিন্ন মহৎ ও কল্যাণকর উদ্দেশ্যা নিহিত থাকে।
এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বদলির জন্য বেশ কিছুকাল যাবৎ শিক্ষকগন আন্দোলন করে আসছি। আমরা বলছি যেহেতু সরকার আমাদের শতভাগ মূল বেতন দিচ্ছেন, কাজেই আমরা সরকারি চাকরির মতোই বদলি, মূলবেতনের শতভাগ উৎসবভাতাসহ এবং সম্মানজনক বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা আশা করতে পারি।
বদলি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিটি পেশার কাজের গতি সঞ্চার করা যায়। শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বদলি প্রক্রিয়া এনে দিতে পারে গতিশীলতা। শিক্ষার মান উন্নয়নে বদলি প্রক্রিয়া জরুরি। শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদের মনোযোগ বাড়াতে বদলি একান্ত প্রয়োজন। বদলির মাধ্যমে নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক তৈরি হবে। শিক্ষকগন পাঠদানের প্রতি মনোযোগী হবেন। শ্রেণি পাঠদানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সিন্ডিকেট দূর হবে। কোচিং বাণিজ্যের হার কমে আসবে। বদলি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন পরিবেশে প্রত্যেক শিক্ষক নিজকে মেলে ধরার চেষ্টা করবে। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন চাকরি করার ফলে নিজের যোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব হয় না। বদলি প্রথার মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়। নতুন পরিবেশে পাঠদান পদ্ধতির পূর্বের ভুলগুলো সংশোধন করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধভাবে প্রস্তুত করতে বাধ্য হবে।
বেশি দিন দূর দূরান্তে চাকরি করার ফলে শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। আর এই হতাশার প্রভাব পড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে তাই বদলি প্রক্রিয়া একান্ত জরুরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চার করতে বদলির বিকল্প কিছু হতে পারে না।
জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ তে উল্লেখ আছে যে “সরকার যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে শিক্ষকদের বদলি করতে পারবেন”। বদলি প্রক্রিয়া চালু করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও বদলি প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখল না। এছাড়া এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে ইনডেক্সধারী শিক্ষককে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তিনি অগ্রাধিকার পাবেন উল্লেখ থাকলেও নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে বারবার। নিয়োগ প্রক্রিয়া ম্যানেজিং কমিটির অধীনে থকাকালীন সময়ে শিক্ষকগন নিজ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারতেন বা করার সুযোগ ছিলো কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এনটিআরসিএ এর অধীনে শিক্ষক নিয়োগ যাওয়ার পর উক্ত সুযোগ থেকে শিক্ষকগন বঞ্চিত হয়েছি সুতরাং যে প্রক্রিয়ায়ই হোক না কেন আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের উক্ত সুযোগ ফিরে পাওয়াটা আমাদের ন্যায্য অধিকার।সরকারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক সফটওয়ারের মাধ্যমে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়টির সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা থাকলেও ২০২০ সালের জুন মাস অতিবাহিত হচ্ছে তবুও এখন পর্যন্ত বদলি প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের বিশেষ কোন কার্যক্রম বা পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বদলি প্রক্রিয়ার কোন প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে না। যেখানে সরকার বদলি প্রক্রিয়া চালু হওয়ার সংবাদ প্রকাশ করায় অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন আজ তা আস্তে আস্তে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের স্বপ্ন মনে হচ্ছে আজ চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ে এনটিআসিএ এর মাধ্যমে জাতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজ জেলায় চাকরির সুযোগ না পেয়ে দূর দূরান্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সিংহ ভাগ শিক্ষক চাকরি করেন।এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের নামমাত্র বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা থাকার কারনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ঐ সকল দূর দূরান্তে থাকা শিক্ষকগন। তাই এই বাস্তবতার কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া চালু করার যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী সহ দায়িত্ব প্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা গণের নিকট বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি আপনারা সম্মিলিত ভাবে যতটাসম্ভব দ্রুত অনলাইন সফটওয়ার ভিত্তিক বদলি প্রত্রিয়া চালু করার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মুক্ত করুন।
#উল্লেখ্য জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী ইন্ডেক্সধারীদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা ঐচ্ছিক বদলি কেন করা হচ্ছে না এই মর্মে উচ্চ আদালতে বর্তমানে দুটি রিট মামলা চলমান। যার প্রস্তাবনা হচ্ছে- এনটিআসিএ যে কোন নতুন বা এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের পূর্বে প্রথমে ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলীর বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে বদলি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরবর্তিতে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। এ ক্ষেত্রে ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলীর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরেও শূন্য পোস্টের সংখ্যা সমানই থাকবে শুধু প্রতিষ্ঠান কিছুটা পরিবর্তন হবে। এতে করে বদলীইচ্ছুক শিক্ষকদের দাবিও পূরন হবে আবার নতুনদেরও কোন সমস্যা হবে না। তা ছাড়া ২য় ক্ষেত্রে অর্থাৎ নতুনদের নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত থাকবে যে, পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন শিক্ষক বা কোন ইন্ডেক্সধারী শিক্ষক আবেদন করতে পাবেন না ফলে শূন্য পোস্টগুলোও পরিপূর্নভাবে ফিলাপ হবে এবং এক্ষেত্রে কোন রকমের কোন জটিলতা থাকবে না।
লেখক
মো: মামুন-অর-রশিদ তালুকদার
বি এসসি অনার্স এম এসসি (গণিত)
পি, জি, এস আ: মা: বিদ্যালয়
মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।