
উৎসব বলতে সাধারণত সামাজিক, ধর্মীয় এবং ঐতিহ্যগত প্রেক্ষাপটে পালিত আনন্দ অনুষ্ঠানকে বোঝায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কিংবা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী উক্ত উৎসবের উৎসব ভাতা নির্ধারন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জায়েদী হাসান খান বলেন সরকারী চাকুরে বা এ ধরণের প্রতিষ্ঠানে সাধারণত চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাদের সর্বশেষ মূল বেতনের সমান অর্থ বোনাস/উৎসব ভাতা হিসেবে দেয়া হয়। আবার আইনজীবী মনজিল মোরশেদ এর বলেন বোনাস/উৎসব ভাতা নিয়ে সরকারি বা সরকার নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমস্যা না হলেও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানে নানা সমস্যা দেখা যায়। তার মতে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের মূল বেতনের সমপরিমাণ দেয়া হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উৎসব ভাতায় ভিন্নতা রয়েছে। কারণ এটা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অনুযায়ী তারাই নির্ধারণ করেন। কেউ মূল বেতনের সমান, কেউ ৫০ভাগ কিংবা ৭০/৮০ ভাগ দিয়ে থাকেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকগন সরকারি শিক্ষকদের সমান হারে মূল বেতনের শতভাগ পেলেও উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
১৯৮০ সালে সরকার বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ প্রদানের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। আরও কিছুদিন পরে ৫০ শতাংশ মূল বেতনের সঙ্গে ১০০ টাকা বাড়িভাড়া সংযোজন করা হয়। এরপরে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের অনেক আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবে বিভিন্ন সরকার ধাপে ধাপে তা বাড়িয়ে ২০০৫ সালে মূল বেতনের শতভাগ সরকার থেকে প্রদান করা হয় এবং তখন থেকে নাম মাত্র বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দেয়া হতো সেই থেকে এমপিওভূক্ত শিক্ষকগন শতভাগ মূল বেতন পাচ্ছেন তবে বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমান সময়ে একটি মধ্যম আয়ের উন্ননশীল দেশে এমপিওভূক্ত শিক্ষকগন মাত্র ১০০০ টাকা বাড়িভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন এবং দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০০৩ সাল থেকে সরকার প্রথমবারের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঈদ বোনাস/উৎসব ভাতা চালু করেন। তৎকালীন সময়ে থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত ২০০৩ সালের নিয়মেই শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। অদ্যাবধি এ ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি।বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীগন যথাক্রমে মুল বেতনের (এমপিওর) ২৫% ও ৫০% উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন।
উপরের সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জায়েদী হাসান খান ও আইনজীবী মনজিল মোরশেদ এর মত বিজ্ঞজনদের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের এমন কোন প্রতিষ্ঠান/সেক্টর নেই যেখানে কর্মীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ২৫% দেয়া হয়, তাহলে এমপিওভূক্ত শিক্ষকগন কি দেশের নিয়মের বহির্ভূত কোন প্রতিষ্ঠান/সেক্টরে কর্মরত? কেন আমাদের সাথে আমাদের কর্তাব্যক্তিদের এমন বৈরী মনোভাব? মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব দুই ঈদ, ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব মানেই আনন্দ কিন্তু আমরা এমপিওভূক্ত শিক্ষকগন কি বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২৫% উৎসব ভাতা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ করতে পারছি? পারছি না বরং উৎসব আসলে লজ্জায় আমাদের মুখ মলিন হয়ে যায় পরিবার পরিজনদের কাছে ছোট হতে হয়। ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী অন্তত একটি পশুর ৫/৭ ভাগের এক ভাগ কুরবানী করার মত অর্থ কি আমরা পাচ্ছি? পাচ্ছি না, বিশেষ করে আমরা যারা ১১, ১০ এবং ৯ কোডে কর্মরত আছি। তারপর অন্যান্য সামাজিক বিষয় তো দূরেই থাক!
কখনো কখনো শোনা যায় এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের এমন দূর্দশা আমাদের উপর মহলের কর্তা ব্যক্তিগন নাকি জানেনই না, আবার গত বছর একজন কর্তা ব্যক্তি নিম্নরুপ মতামত দিয়েছিলেন-
“শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব-ভাতা সরকারের দেবার কথা নয়। এটা সরকার থেকে অনেকটা জোর-জবরদস্তি করে নিয়ে আমরা শিক্ষকদের দিই। তবে দিলে পুরো বোনাসই দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন জ্যেষ্ঠ এই সরকারি কর্মকর্তা।” (সূত্র: এডুকেশন বাংলা)
বেতন দিচ্ছেন সরকার অথচ বোনাস/উৎসব ভাতা সরকারের দেয়ার কথা নয় তাবে কার দেয়ার কথা? যা দিচ্ছেন তাও জোর-জবরদস্তি করে এই যদি হয় আমাদের দেখভাল করা ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য তবে আদৌ আমাদের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন আসবে কি না আল্লাহমালুম! তারপরেও পরিশেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের মূল বেতনের শতভাগ উৎসবভাতা চালু করার মত যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী সহ দায়িত্ব প্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা গণের নিকট বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি আপনারা সম্মিলিত ভাবে শিক্ষাদরদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর সাথে আলোচনাসাপেক্ষে এই ঈদেই মূলবেতনের শতভাগ উৎসবভাতা চালু করার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে একযোগে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে একটি সময়উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মুক্ত করুন।
লেখক
মো: মামুন-অর-রশিদ তালুকদার
বি এসসি অনার্স এম এসসি (গণিত)
সহকারী শিক্ষক (গণিত)
পি, জি, এস আ: মা: বিদ্যালয়
মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।