এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো)।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের প্রাণের দাবি এমপিওভূক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে কর্মসূচী ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম (বাবেশিকফো) এর কেন্দ্রীয় কমিটির এক জরুরী আলোচনা সভা গত ০৮-০৩-২০২৩ইং সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়: কুর্মিটোলা হাই স্কুল এন্ড কলেজ, খিলক্ষেত, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাইদুল হাসান সেলিম এর সভাপতিত্বে এবং মহসচিব মো. আব্দুল খালেকের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের আলোচনার ভিত্তিতে এমপিওভূক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম (বাবেশিকফো) এবং অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া ও অধ্যক্ষ শেখ কাওসার আহমেদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (BTA)) এর সাথে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাইদুল হাসান সেলিম তার বক্তবে বলেন, “শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। আমরা জানি ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। তাই শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয়, তবে শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার মেরুদন্ড; সমাজ ও সভ্যতার বিবেক এবং জাতি গঠনের স্থপতি।” তিনি আরো বলেন- দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভূক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারি দ্বারা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা এমপিওভূক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ২৫% উৎসব ভাতা, ১,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাই। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছি এবং এই অতিরিক্ত কর্তনের বিপরীতে বর্ধিত সুবিধার দাবিতে ফোরাম মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছে। তিনি শিক্ষকদের এই বৈষম্যগুলো হতে মুক্তি দিতে এমপিওভূক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি করেন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মো. আব্দুল খালেক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সংবাদ সম্মেলন করে এবং স্মারকলিপি প্রদান করে সরকারের নিকট আমাদের দাবিনামা উপস্থাপন করে আসছি এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীক অনশন, অবস্থান ধর্মঘটসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রায় দুই লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর উপস্থিতিতে এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ করেছি। ২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটানা ২০ দিন অবস্থান ও অনশন কর্মসূচী পালন করি। উক্ত আন্দোলনের ফলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনা নির্বাচনের পূর্বে মূহুর্তে শিক্ষকদের ৫% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখি ভাতা প্রদানের ঘোষণা প্রদান করেন।
আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম (বাবেশিকফো) এর মহাসচিব মো. আব্দুল খালেক গত ০৮-০৩-২০২৩ তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (BTA) এর সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওসার আহমেদের ঘোষিত কর্মসূচীর সাথে যুগপৎ আন্দোলন এবং নিন্মোক্ত কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন।
ঘোষিত কর্মসূচী:
১। আগামী ১৩ মার্চ, ২০২৩ সোমবার সকাল ১১টায় সারাদেশে জেলা সদরে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক/বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
২। আগামী ১৪ মার্চ, ২০২৩ মঙ্গলবার এমপিওভূক্ত শিক্ষা জাতীকরণের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ ঘণ্টার কর্মবিরত পালনসহ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জাতীকরণের দাবিতে সম্পৃক্ত করা।
৩। আগামী ২০ মার্চ, ২০২৩ সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মহাসমাবেশ।
এরপরেও যদি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের ঘোষণাসহ আসন্ন জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ রাখা না হয়, তবে সারাদেশের হতাশ ও বিক্ষুব্ধ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিগণ জাতীয় বাজেট ঘোষণার পরে কঠোর থেকে কঠোতর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।
উক্ত আলোচনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোদাচ্ছির আলম, সহসভাপতি অলি আজাদ, অধ্যক্ষ এ বি এম গোলাম নূর, যুগ্ম মহাসচিব মো. আনোয়ার হোসেন, রেহান উদ্দিন, জ্যোতিষ মজুমদার, সৈয়দ শওকতুজ্জামান, অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির কামাল, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম সাদেক, এম এ মতিন, অর্থ সম্পাদক মো. কামরুল হাছান, যুগ্ম অর্থ সম্পাদক আব্দুল কাদির সুমন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. মাসুম বিল্লাহ প্রমূখ।
