“এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি সময়ের দাবী”           

প্রকাশিত: ১১:৩০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি সময়ের দাবী।       মোঃ আবদুর রহমান।

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। একটি উন্নত জাতি গড়ে তুলতে হলে উন্নত শিক্ষার বিকল্প নেই। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়েই গড়ে উঠেছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রাণ হলো আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ। শিক্ষকদের জন্য মানসম্মত পাঠদানের পরিবেশ এবং তাদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটা বৃহৎ অংশ ( প্রায় ৯৭% ) হলো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ। দেশের প্রায় ৯৭ ভাগ শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেবা দান করে আসছেন । সিংহভাগ শিক্ষক বেসরকারি হওয়া সত্তেও তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং অবহেলিত।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজের শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা নেই। ফলে অন্য জেলায় কর্মরত শিক্ষকদের বৃদ্ধ বাবা-মা, স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকতে হয়। স্থানীয়ভাবে নিয়োগদানের কারণেই বদলিটা কঠিন ছিল। কিন্ত সরকার বর্তমানে কমিশনের মাধ্যমে প্রতিটি জেলা ,উপজেলা, বিভাগের মধ্যে এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে যেখানে পদ শূণ্য রয়েছে সেখানকার যথাযথ কতৃপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক বদলির সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। কমিশন প্রতিবছর প্রথমে বদলি হতে আগ্রহী আবেদনকারী শিক্ষকদের মধ্যে শূন্যপদ পূরণ করবেন। তারপর নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্নদের মধ্য থেকে অবশিষ্ট শূন্যপদ পূরন করতে পারেন। এর ফলে অন্য জেলায় কর্মরত শিক্ষকগণ নিজের বাড়িতে স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি অন্য জেলায় থাকতে যে বাড়ি ভাড়া দিতে হয়, সেটা থেকেও স্বল্প বেতনের শিক্ষকগণ রেহাই পাবেন।

দৈনিক শিক্ষা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন ও পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন, বৈষম্য দূরীকরণ ও শিক্ষা ব্যবস্থার মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উক্ত কমিটি নীতিমালা সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন করে থাকবেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষক সমাজ সাধুবাদ জানায়। আশা করছি যৌক্তিক ও মানসম্মত একটি নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

এমপিও নীতিমালা-সংশোধন হতে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষক সমাজের প্রত্যাশা এ নীতিমালার মাধ্যমে তাদের দৈন্যতা, সীমাবদ্ধতা ও বৈষম্যের অবসানের দরজা খুলবে। এমপিও নীতিমালা ১৯৯৫ থেকে এমপিও নীতিমালা ২০০৫, ২০১০ ও ২০১৮ এর বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ও ধারায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থার নির্দেশনা থাকলেও আজ পর্যন্ত বদলি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষক সমাজ হতাশায় ভুগছে।

সীমাহীন দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু করা একান্ত জরুরি বলে মনে করে পাঁচ লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক। শিক্ষার মান উর্ধ্বগামী করতে, বিশ্ব মানের শিক্ষা অর্জন করতে বদলি ব্যবস্থা চালুর বিকল্প নেই। দৈনিক শিক্ষার বার্তা সূত্রে জানতে পারলাম সরকার ২০২০ খ্রিঃ জানুয়ারি থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় বদলি ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুায়ারি থেকে অনলাইনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি পদ্ধতি চালু করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী , শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিও নীতিমালা সংশোধন ও পর্যালোচনা কমিটির প্রতি বিনীত অনুরোধ করেছেন দল ও মত নির্বিশেষে সকল পর্যায়ের শিক্ষক সংগঠন। বদলি ব্যবস্থা চালু হলে শিক্ষকদের মধ্যে গতিশীলতা আসবে, নতুন পরিবেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন শিক্ষক পেয়ে আনন্দ উল্লাসের সাথে সুন্দর ও উপভোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দীর্ঘদিন একই জায়গায় একই প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের ফলে শিক্ষকদের মধ্যে যে একঘেয়েমি তৈরি হয় তা দূর হবে। শিক্ষকরা স্থানীয় পলিটিক্সে জড়াতে পারবে না এবং শিক্ষকদের এসিআর বাস্তবায়ন করা খুব সহজ হবে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু হলে শিক্ষকদের প্রাইভেট, কোচিং, গাইড ও নোটবাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে । শিক্ষকরা দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করার ফলে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট দূর হবে যার ফলে শিক্ষার ও শিক্ষকের মান বাড়বে। অন্যদিকে শিক্ষকদের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ, নীতি বহির্ভূতভাবে শিক্ষকদের চাকুরিচ্যুতি, বহিষ্কার ও ম্যানেজিং কমিটির নির্যাতন কমে যাবে। যার ফলে ভাল শিক্ষকদের কদর বাড়বে, মেধাবী প্রাথীদের শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং শিক্ষকতায় অবশ্যই ভাল  শিক্ষক আসবে। ভাল মন্দ শিক্ষক বদলির মাধ্যমে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার সকল স্তরে শিক্ষার মান সমন্বয় হবে, ইনশাআল্লাহ।

দেশের সব প্রতিষ্ঠানের মান প্রায় সমান হয়ে যাবে। অনিয়ম ও দূর্নীতি রোধ করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের শাস্তিমূলক বদলি করা সহজ হবে এবং শিক্ষকদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের পাঠদান বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে, মেধা বিকাশ নিশ্চিত হবে। বদলি ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে সকল স্তরের শিক্ষকদের চাকুরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ উদ্দ্যোগ নিলে নির্ভেজাল ও সুষ্ঠভাবে সকল ইনডেক্সধারী বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করতে পারেন। বদলির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করে সহজেই বদলি হতে ইচ্ছুক শিক্ষকদের সমপদে বদলির ব্যবস্থা করা যায়। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে শূন্যপদের তালিকা নিয়ে ইনডেক্স অনুযায়ি জোষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলির ব্যবস্থা করতে পারেন। বদলির ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিষ্ঠান চয়েজ দেয়ার সুযোগ,  স্বামী-স্ত্রীর কাছাকাছি প্রতিষ্টানে বদলি ও নিজ এলাকায় বদলির সুযোগকে অগ্রাধিকার দেয়া হলে ছোট ছোট সন্তান বাবা মায়ের সান্নিধ্য এবং বৃদ্ধ বয়সে বাবা মা সন্তানের সান্নিধ্য পাবে।

বইয়ের নাম : বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইন ম্যানুয়াল। লেখক: মোঃ জহুরুল ইসলাম। পৃষ্ঠা নং :৬৯২-৬৯৩ শিবিশাঃ ১০/ বিধি ১০-৭/৯৪/৯১৮-শিক্ষা। তারিখ ০৫-১০-১৯৯৪ ইং । কর্মকর্তা/ শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বদলি সংক্রান্ত “পরিপত্র”। বদলির সাধারণ নীতিমালা বই বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ভিতরে নীতিমালা সরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তা / শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের বদলী সংক্রান্ত “পরিপত্র”।

সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট সবকটি বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিনিত নিবেদন ২০২০ সালের মধ্যে অধ্যক্ষ থেকে কেরানি পর্যন্ত বদলির ব্যবস্থা করে বৃদ্ধ মা বাবার প্রতি সন্তানের হক আদায়ের, শিশু সন্তানের প্রতি পিতার আদর স্নেহ, গর্ভবতী স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক আদায়ের সহযোগিতা দানে বদলির ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি । উল্লেখ্য পাঁচ লক্ষ এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক সমাজের জন্য যিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন তার জন্য মহান সৃিষ্টকর্তার দরবারে সকলে দু’হাত তুলে দোয়া করবেন।

বদলির দাবীতে জাতিয় প্রেশক্লাবের সামনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেত্রীবৃন্দের রেলি ও মিছিল।

লেখক: মোঃ আবদুর রহমান, উপাধ্যক্ষ,
রোকনউদ্দিন মোল্লা গালর্স ডিগ্রী কলেজ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।


Categories