ইন্টারমিডিয়েট কলেজের প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদ কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানালেন প্রভাষকরা
পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষক সমাজের ভার্চুয়াল প্রতিবাদ সভা

এমপিও নীতিমালা সংশোধনী চুড়ান্তকরণের সভায় ইন্টারমিডিয়েট কলেজের প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদের পরিবর্তে সিনিয়র প্রভাষক পদে অবনমন সহ প্রভাষক বিরোধী বেশ কয়েকটি প্রস্তাবের প্রতিবাদে আজ ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষক সমাজের উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষক সমাজের প্রধান সমন্বয়কারী জনাব জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এবং মুখপাত্র জনাব এম.এ.মতিনের সভাপতিত্বে উক্ত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি জনাব জ্যোতিষ মজুমদার।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষক সমাজের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী শামীম, এম.এ.হালিম, রতন কুমার সরকার, রাফি উদ্দিন শামীম, মনিরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এ প্রভাষকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়।তার প্রতিবাদে প্রভাষকরা সোচ্চার হলে সরকার গত বছরের নভেম্বর মাসে একটি ১০ সদস্য বিশিষ্ট নীতিমালা সংশোধন কমিটি গঠন করে ১ মাসের মধ্যে চুড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। কিন্তু আজ ১০ মাস যাবত উক্ত কমিটি তাদের কাজ শেষ করতে পারেনি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে নীতিমালা সংশোধন কমিটির সদস্য গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার এর বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রভাষকদের হতাশা আরো বৃদ্ধি পায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন থেকে আর ইন্টারমিডিয়েট কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হবেনা। বরং তার পরিবর্তে উক্ত কলেজসমুহে সিনিয়র প্রভাষক পদ সৃষ্টি করা হবে।
নীতিমালা চুড়ান্তকরণের সভায় আলোচনা হয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের কোন শিক্ষক একই কলেজে অধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবেননা, তবে ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা আবেদন করতে পারবেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন , উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজের প্রভাষকদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাদের যোগ্যতা , পদবী এবং বেতন স্কেল এক। এ যাবত কোন নীতিমালায় উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পর্যায়ের প্রভাষকদের মধ্যে কোন বিভাজন সৃষ্টি করা হয়নি। তাছাড়া ইন্টারমিডিয়েট পর্যায় হচ্ছে শিক্ষাজীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট। এ পর্যায়ের শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করা হলে শিক্ষাক্ষেত্রে তার সূদুরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। মেধাবীরা এ পর্যায়ে শিক্ষকতার প্রতি নিরুৎসাহিত হবে এবং জাতি মেধাশুশূন্যতার দিকে ধাবিত হবে।
বক্তারা বলেন, প্রতিবেদন মোতাবেক নীতিমালা সংশোধনী চুড়ান্তকরণের সভায় ১০০ নম্বরের সূচকের ভিত্তিতে (অভিজ্ঞতা, এসিআর গবেষণা ইত্যাদির ভিত্তিতে) ১০ বছর পর অর্ধেক প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক (উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ক্ষেত্রে সিনিয়র প্রভাষক) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
তারা বলেন, এমনিতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাদের হাতে এসিআরের দায়িত্ব দিলে শিক্ষক নির্যাতন এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বৃদ্ধি পাবে। যার ফল হিতে বিপরীত হবে।
সরকারি কলেজের প্রভাষকদের পদোন্নতিতে কোন গবেষণার প্রয়োজন হয়না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের পদোন্নতি গবেষণার ভিত্তিতে হয়। সেক্ষেত্রে তারা সবেতনে গবেষণা ছুটি, গবেষণা ভাতা সহ নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। যার কোনটিই এমপিওভুক্ত কলেজে নেই। তাহলে এমপিওভুক্ত কলেজের প্রভাষকরা গবেষণার সুযোগ পাবে কিভাবে?
নেতৃবৃন্দ নীতিমালা সংশোধন কমিটির এ ধরণের উদ্ভট প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং এ সকল অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক বিষয় নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত না করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
তারা অবিলম্বে নীতিমালায় বিদ্যমান বৈষম্যমূলক অনুপাত প্রথা বাতিল করে সকল প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদানের জোর দাবি জানান। প্রভাষকদের অযৌক্তিক উচ্চতর স্কেল (১০ বছরে ১হাজার টাকা বৃদ্ধি) বাতিল এবং অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ নিয়োগে ২০১০ এর নীতিমালা বহালের দাবি জানান।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, নীতিমালায় কোন বৈষম্য সৃষ্টি করা হলে কিংবা একজন প্রভাষক ও পদোন্নতি বিহীন থাকলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।