আকিজ কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন

এম এ রায়হান, যশোর জেলা প্রতিনিধি।
যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণে অবস্থিত আকিজ কলেজিয়েট স্কুল। এটি দক্ষিণবঙ্গ তথা খুলনা বিভাগের মধ্যে একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটি আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম শেখ আকিজ উদ্দিনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি আকিজ গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তার ছেলে ডাঃ মহিউদ্দিন (আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্টাতা ও চেয়ারম্যান) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তিনি আরও চারটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
উক্ত প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে স্কুল পর্যায়ে ৭৪২ জন ছাত্র-ছাত্রী ও কলেজ পর্যায়ে ২৬১ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত আছে। মোট শিক্ষক সংখ্যা ৬০ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ জন। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মোঃ আজিজুল হক অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এটিই অত্র অঞ্চলের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে বাংলা, ইংরেজি ভার্ষন ও হাফেজী পড়ার সুব্যবস্থা আছে।
গত ১৭/০৩/২০২০তারিখে বিশ্ব কোভিড-১৯ তথা করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত এই প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পর মাত্র এক মাস প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষক কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ বেতন প্রদান করেন। পরবর্তীতে মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত তাদের বেতনের ৩০% প্রদান করা হচ্ছে।
এমতাবস্থায় ৭৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উল্লেখ্য এই প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকের বাড়ি দুরে হওয়ার কারণে তাদের ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। নাভারণে একটি দুই রুমের বাসা ভাড়া ৫০০০/- টাকা।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন বর্তমানে আমাদের যে বেতন দিচ্ছে বাসা ভাড়া দেওয়ার পর আর কিছু থাকে না। এমতাবস্থায় আমরা খু্ব অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছি।
অধ্যক্ষের নিকট জানতে চাইলে, তিনি “দৈনিক আমাদের ফোরামকে” বলেন, এটি একটি ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিষ্ঠান তো করোনাকালীন সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই ১২ এপ্রিল থেকে অনলাইন ক্লাস করছি। বর্তমানে জুমের মাধ্যমে ক্লাস করা হচ্ছে। এই মহামারি কালিন যা দিচ্ছে এটাই ডাঃ মহিউদ্দিন সাহেব নিজস্ব অর্থায়নে দিচ্ছেন। আর ছাত্র-ছাত্রীরা তো ঠিকমত বেতন দিচ্ছে না তাহলে কিভাবে শিক্ষকদের বেতন দিবে।
অপরদিকে গোপন সুত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে প্রায় ৪২ ০০,০০০/-(বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট হতে আদায় হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, আমাদের নিকট হতে প্রতিমাসে পূর্ণাঙ্গ বেতন নিচ্ছে তাহলে শিক্ষকদের কেন তিনভাগের এক ভাগ বেতন দেওয়া হবে? এটা খুবই অমানবিক, মেনে নেওয়া যায় না।
শিক্ষকদের দাবী যেহেতু কর্তৃপক্ষ স্বনামধন্য শিল্পপতি ও মানবিক মানুষ। তাই তাদের পরিবারিক ও সামাজিক দিক বিবেচনা করে পূর্ণাঙ্গ বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, এমনটিই তারা ও অভিভাবক মহল প্রত্যাশা করেন।