
“অনলাইন ক্লাস ও কিছু কথা” সাজেদা আকতার।
গত সতেরই মার্চ থেকে শিক্ষার্থীরা গৃহকোণে। করোনাকালীন এ সময়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে।
এস এস সির ফল প্রকাশ হয়েছে প্রায় আড়াই মাস হতে চললো। এখন ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কিন্তু এইচ এস সি পরীক্ষা স্থগিত। এখনো অনিশ্চিত কখন পরীক্ষা হবে? পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন, কখন পরীক্ষা হবে? সরকার শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে, এ করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাসের পরিকল্পনা করেছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
বহির্বিশ্বের দিকে তাকালেও আমরা তাই দেখতে পাই। কিন্তু দেশে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছেলে মেয়ে উভয়ই আছে। আমরা প্রায় সময় দেখতে পাই, ছেলেদের হাতে স্মার্ট ফোন শোভা পেলেও মেয়েদের হাতে নেই। অভিভাবকও হয়ত মেয়েদের পেছনে টাকা খরচ না করে পুত্র সন্তানদের পেছনে খরচ করেন। অথবা তাদের পীড়াপীড়িতে স্মার্ট ফোন কিনে দিতে বাধ্য হন। আবার মোবাইল চালানোর জন্য হয়ত খরচও বহন করেন।
আমি সব সময় আমার ক্লাসে, ছেলেদের থেকেও মেয়েদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করি। আরো লক্ষ্য করি, কখনো কারো কোনো ফোনের রিং টোন বেজে উঠলো কিনা। কিন্তু না, ছেলেদের কচিৎ এক আধটা বেজে উঠলেও, মেয়েদের কখনোই বেজে উঠে না। পরীক্ষার সময় মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। তখনো ছেলেদেরকে দেখি, কেউ কেউ মোবাইল নিয়ে আসে।
আমরা কেন্দ্রে প্রবেশের সময় চেক করে বাইরে রেখে আসতে বলি। কিন্তু মেয়েরা বলে, – ম্যাডাম, আমাদের তো মোবাইলই নেই, আনবো কোত্থেকে?
তাই বলছি, অনলাইন ক্লাসের কথা। মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী ছাড়া বেশিরভাগই আমাদের গ্রাম প্রধান দেশে, গ্রামে বাস করছে। সেখানে অনলাইন ক্লাসের শিক্ষার আলো পৌঁছলেও, প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি। কারণ, লোড শেডিং বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছে না। স্মার্ট ফোনের অভাব। ফোন চালানোর খরচের অভাব। এমন অনেকেই আছে, যাদের দুবেলা দুমুঠো খেতেই কষ্ট হয়ে যায়। তাদেরকে স্মার্ট ফোনে ওয়াই ফাই সংযোগ বা ডাটা কিনে অনলাইনে লেখা পড়া করার কথা বলা, রসিকতা বই তো কিছু নয়। অনেকে আছে অভিভাবকের স্মার্ট ফোনে ক্লাস করে। আবার দেখা যাচ্ছে, অনেকের অভিভাবকদেরই স্মার্ট ফোন নেই। শুধু যোগাযোগের জন্য অতি সাধারণ ফোন। তাদের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
প্রভাষক, বাংলা বিভাগ।